নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ | Landforms caused by river erosion
বন্ধুগন,
আজকে আমরা পড়বো নদীর কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে, যেটা আমাদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন রকম চাকরির পরীক্ষা গুলিতে আশা এই টপিক থেকে ছোটো ছোটো প্রশ্ন গুলির উত্তর দিতে সাহায্য করবে। আর এই টপিকটি ভূগোল বিষয়ের কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আলাদা করে বলবার প্রয়োজন নেই, যারা আগেও বিভিন্ন রকম চাকরির পরীক্ষা গুলিতে বসেছিলে তাদের কাছে।
সুতরাং আর কোনো রকম সময় নষ্ট না করে , শিখে নেওয়া যাক নদীর কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির সম্পর্কে।
নদীর কাজ
নদী তার উপত্যকায় ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়কাজের মাধ্যমে ভুমিরুপের পরিবর্তন ঘটায়।
ক্ষয়কাজ - পার্বত্য অঞ্চলে ভুমির ঢাল বেশি এবং ভূমিরূপ খুব বন্ধুর প্রকৃতির হয়, তাই সেখানে নদীর জলস্রোতের বেগ খুব প্রবল হয়। নদী প্রস্তরখণ্ডকে ক্ষয় করে চূর্ণবিচূর্ণ এবং স্থানচ্যুত করে, একেই নদীর ক্ষয়কাজ বলে। নদী সাধারনত ৬ ভাবে ক্ষয়কাজ চালায়, (১) জলপ্রবাহ ক্ষয় (২) অবঘর্ষ ক্ষয় (৩) সংঘর্ষ ক্ষয় (৪) ঘর্ষণ ক্ষয় (৫) বুদবুদ ক্ষয় (৬) দ্রবন ক্ষয়।
বহনকাজ - নদীর ক্ষয়কাজের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ অর্থাৎ প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাদা ইত্যাদি নদী তার জলস্রোতের দ্বারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে বয়ে নিয়ে যায়, একে নদীর বহনকাজ বলা হয়।
নদীর বহনকাজ প্রধানত ৪টি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, (১) দ্রবন প্রক্রিয়ায় বহন (২) ভাসমান প্রক্রিয়ায় বহন (৩) লম্ফদান প্রক্রিয়ায় বহন (৪) গড়ানো প্রক্রিয়ায় বহন।
সঞ্ছয়কাজ - নদীর গতিবেগ হ্রাস, গতিপথের ঢাল হ্রাস, বোঝার পরিমাপ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারনে নদীর বহনহ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে নদীর বোঝা নদীর তলদেশে কিংবা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়, একে নদীর সঞ্চয় না অবক্ষেপণ বলা হয়।
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
নদী তার ক্ষয়কাজ সাধারণত উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি এই তিনটি প্রক্রিয়ায় করে থাকে। আমরা এখন জানবো এই তিনটি গতির মাধ্যমে কি কি ভূমিরূপ সৃষ্টি করে থাকে।
উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে সৃষ্ট ভূমিরূপ - নদীর উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহের ক্ষয়জাত ভূমিরূপ গুলি হল নিম্নরূপ -----
(১) V- আকৃতির উপত্যকা -
![]() |
V- আকৃতির উপত্যকা |
❏ পার্বত্য প্রবাহে নদী প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে নিম্নক্ষয় করে ও উপত্যকা গভীর হতে থাকে। নদী পার্শ্বক্ষয় খুব কম করে এইসময় অধিক নিম্নক্ষয় ও সামান্য পার্শ্বক্ষয়ের ফলে নদী-উপত্যকা ইংরেজি অক্ষয় 'V'-এর মতো দেখতে হয়, একে 'V'-আকৃতির উপত্যকা বলে। অতি খাড়া ঢাল, আবহবিকার ও খরস্রোতা নদী 'V'-আকৃতির উপত্যকা গঠনে সহায়ক হয়।
(২) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন-
![]() |
গিরিখাত ও ক্যানিয়ন |
আবার সাধারণত পার্বত্য প্রবাহে নদী শুস্ক অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পার্শ্বক্ষয়ের তুলনায় নিম্নক্ষয় বেশি করে থাকে, সেই কারনে নদী সেখানে অত্যন্ত গভীর, সংকীর্ণ ও দীর্ঘ নদি-উপত্যকার সৃষ্টি করে যা ইংরেজি 'I' আকৃতির মতো দেখতে হয়, এই ধরনের ভূমিরূপকে ক্যানিয়ন বলে। যেমন - কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
(৩) জলপ্রপাত-
![]() |
জলপ্রপাত |
❏ নদীর প্রবাহপথে ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের জন্য জলস্রোত খাড়া ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে প্রবল বেগে পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে। জলপ্রপাত বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হতে পারে সেই গুলি হল -----
◉ নদীর প্রবাহপথে পরপর কঠিন ও নরম শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার নীচে নরম শিলা তাড়াতাড়ি ক্ষয় পেয়ে খাড়া ঢাল তৈরি করে ও জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
◉ নদীর প্রবাহপথে আড়াআড়ি চ্যুতি থাকলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। ইন্দ্রাবতী নদীর চিত্রকোট (ভারতের নায়াগ্রা)।
◉ হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যকার ওপর থেকে বরফগলা জল নীচে পড়ে জলপ্রপাত তৈরি করে।
◉ নদীর পুরাতন ঢাল ও নতুন ঢালের মিলন বিন্দুকে নিক বিন্দু বলে। ঢালের বিচ্যুতির জন্য নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন - ভেনেজুয়েলার অ্যাঙ্গেল জলপ্রপাত পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।
(৪) খরস্রোতা-
![]() |
খরস্রোতা |
(৫) আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত শৈলশিরা-
![]() |
শৃঙ্খলিত শৈলশিরা |
(৬) প্রপাতকূপ বা প্লাঙ্গপুল-
![]() |
প্রপাতকূপ বা প্লাঙ্গপুল |
(৭) মন্থকূপ বা পটহোল-
![]() |
মন্থকূপ বা পটহোল |
মধ্য ও নিম্নগতিতে সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ-
উভয় গতিতে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রকার ভুমিরুপগুলি হল-- পলল শঙ্কু ও পলি ব্যজনী, নদী বাঁক, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, প্লাবনভুমি ও স্বাভাবিক বাঁধ , নদীচর এবং নদী বদ্বীপ প্রভৃতি।
(১) পলল শঙ্কু ও পলি ব্যজনী-
![]() |
পলল শঙ্কু ও পলি ব্যজনী |
সৃষ্টির কারন- পর্বতের পাদদেশে ভুমির ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে নদীর বহনক্ষমতা কমে যায় এবং সমস্ত ক্ষয়জাত পদার্থ পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে এই প্রকার ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।
(২) নদীবাঁক বা মিয়েন্ডার-
![]() |
নদীবাঁক বা মিয়েন্ডার |
তুরস্কের মিয়েন্ডারেস নদীর নামানুসারে এই ভূমিরূপের নাম হয়েছে মিয়েন্ডার। নদীবাঁকের ভিতরের অংশে নদীর খাড়া পাড় তৈরি হয় আবার, বাইরের অংশে জলের পরিমাণ ও স্রোত কম থাকে। ফলে নদীর ওই অংশে পলি জমে মৃদু ঢালযুক্ত নদীপাড় গড়ে ওঠে, একে Slip-off slope বলে। এই পাড়ের সঞ্চয়কে বিন্দুবার বলে।
নদীবাঁক- ভূভাগের পুনযৌবন ঘটলে নদীর ক্ষয় করার শক্তি খুব বেড়ে যায় নদী তখন খাতেকে গভীরভাবে কেটে আরও নীচের দিকে বসে যায় এতে নদীবাঁকের দুইপাড় খাড়া হয়। এ ধরনের নদীবাঁককে কর্তিত নদীবাঁক বলে।
(৩) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ -
![]() |
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ |
সৃষ্টির কারন -
◉ নদীবাঁকের অবতল অংশে ক্রমাগত জলস্রোতের ধাক্কায় বেশি পরিমানে ক্ষয় হয় এবং সেই সঙ্গে উত্তল অংশে পলি সঞ্চয়ের ফলে নদীবাঁকের অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটে।
◉ একসময় বাঁকের দুই মুখ পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে, এদের মাঝখানে অবস্থিত সরু একফালি ভুমি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে অবশেষে এরা জুড়ে যায়, নদী তখন বাঁক পথ ছেড়ে সোজা পথে বইতে থাকে।
◉ পরিত্যক্ত স্রোতহীন বাঁক নদীখাতের দুই মুখ কালক্রমে বালি, পলি, কাদায় বুজে গিয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি করে।
(৪) প্লাবনভুমি -
![]() |
প্লাবনভুমি |
সৃষ্টির কারন - মধ্যপ্রদেশে নদীতে জলস্রোত কম থাকায় পলি জমে জমে নদীগর্ভে ভরাট ও অগভীর হয় এতে নদীর জলধারনক্ষমতা কমে যায় বন্যার সময় নদী প্রচুর পরিমানে পলি বয়ে আনে তখন অতিরিক্ত জল দুকূল উপচে উপত্যকাকে প্লাবিত করে কিছুদিন পর পলি থিতিয়ে গিয়ে পলির মোটা স্তর তৈরি করে। এভাবে উপত্যকা ক্রমাগত বন্যার পলি দিয়ে ভরাট হয়ে প্লাবনভুমির সৃষ্টি করে।
(৫) স্বাভাবিক বাঁধ-
![]() |
স্বাভাবিক বাঁধ |
সৃষ্টির কারন - বর্ষার সময় নদীতে প্রচুর পরিমানে পলি আসে দুকূল উপচে জল প্লাবনভুমিতে ছড়িয়ে পড়লে বড়ো দানার পলিসমুহ নদীপাড়ের কাছেই দ্রুত থিতিয়ে পড়ে, বেশি দূর ছড়িয়ে যেতে পারে না এভাবে পলি জমে জমে উঁচু হয়ে এক সময় নদীপাড় বরাবর বাঁধ তৈরি হয়।
(৬) খাঁড়ি বা প্রশান্ত মোহনা-
![]() |
খাঁড়ি বা প্রশান্ত মোহনা |
(৭) বদ্বীপ-
![]() |
বদ্বীপ |
◉ বিভিন্ন আকৃতির বদ্বীপ গঠন - বেশিরভাগ বদ্বীপই ত্রিকোণমিতির মতো হয়, তবে আকৃতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বদ্বীপকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় -
▣ ধনুকাকৃতি বদ্বীপ-
![]() |
পাখির পা-এর মতো বদ্বীপ |
আরও পড়ুন- একনজরে সৌরজগতের গ্রহদের পরিচয়
Darun
ReplyDelete