একনজরে জোয়ারভাটা শক্তি - জোয়ারভাটা শক্তি কি? | উৎপাদনের সুবিধা ও অসুবিধা
বন্ধুগন,
আজকে তোমাদের সামনে আলোচনার বিষয় হলো, জোয়ারভাটা এবং জোয়ারভাটার শক্তি। আমরা সকলেই জানি জোয়ারভাটা কি, কেনো হয় ও কতক্ষণ ছাড়া হয় কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা জোয়ারভাটা থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সেই সম্পর্কে জানিনা বা সেই শক্তি কীভাবে উৎপন্ন হয় এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলির সম্পর্কে জানিনা।
তাই আর সময় নষ্ট না করে মনোযোগ সহকারে জেনে নেওয়া যাক জোয়ারভাটা শক্তি সম্পর্কে।
✯ জোয়ারভাটা কি ?
চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ এর ফলে সমুদ্রের জল নিয়মিতভাবে এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় নেমে যায় প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্র জলের ফুলে ওঠাকে জোয়ার বলে।
জোয়ারের ফলে সমুদ্রের জল যেখানে ফুলে ওঠে, তার সমকোণে অবস্থিত স্থানে সমুদ্রের জল নেমে যায় একে ভাটা বলে।
✯ জোয়ার ভাটা কেন হয় ?
দুটি প্রধান কারণে জোয়ার ভাটা হয় (১) পৃথিবীর আবর্তন ও (২) পৃথিবীর উপর সূর্যের চাঁদের আকর্ষণ।
পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর মেরুদন্ড নিজের চারিদিকে নির্দিষ্ট গতিতে অবিরাম ঘুরে চলেছে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কেন্দ্রবিমুখ ও বহির্মুখী শক্তি উৎপন্ন হয়। এই বহির্মুখী শক্তির প্রভাবে সমুদ্রের জল বাইরের দিকে বেরিয়ে যেতে চাই। চাঁদের আকর্ষণ সমুদ্রের যেখানে জোয়ার হয় তার ঠিক বিপরীত দিকে আকর্ষণ এর তুলনায় কেন্দ্রবিমুখ বলের প্রভাব বেশি হয় ফলে সমুদ্রের ওই স্থানে জোয়ার হয়। সমুদ্রে পরস্পর বিপরীত যে দুটি স্থানে জোয়ার হয় তার সমকোণে অবস্থিত দুটি স্থানে তখন ভাটা হয়।
পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ : সূর্যের ভর চাঁদের তুলনায় প্রায় 2 কোটি 60 লক্ষ গুণ বেশি। কিন্তু চাঁদের তুলনায় সূর্য প্রায় 390 গুন দূরে অবস্থিত। চাঁদের ভর কম হওয়া সত্বেও সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে রয়েছে বলে, পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের তুলনায় প্রায় দু গুণ বেশি তাই প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার হয়।
✯ জোয়ারভাটার সময় ঃ
কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট একটি সময়ে মুখ্য জোয়ার হওয়ার ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার হয় এবং মুখ্য জোয়ারের ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পর সেখানে আবার মুখ্য জোয়ার হয়।
তাই প্রত্যেক স্থানে জোয়ারের ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে ভাটা হয়।
জোয়ারভাটা শক্তি
✯ সংজ্ঞা ঃ
জোয়ারের সময় প্রবলবেগে জল সমুদ্র থেকে নদীতে প্রবেশ করে, ভাটার সময় আবার সেই নদীর জল সমুদ্রে ফিরে যায়।এই জোয়ারভাটার প্রবল জলস্রোতে টারবাইন ঘুরিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে বলে জোয়ারভাটা শক্তি।
✯ জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের সুবিধা ঃ
জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সুবিধা পাওয়া যায় সেই গুলি হল নিম্নরূপ -
01. এই প্রজেক্টের জন্য ব্যায় খুবি অল্প।
02. এটি একটি প্রবহমান ও দূষণহীন শক্তি।
03. প্রায় সব দেশের উপকূলভাগে এই শক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে।
04. সব সময়ের চলমান শক্তির উৎস, কারণ প্রত্যেকদিনই জোয়ারভাটা হয়। সব সময়ের চলমান শক্তির উৎস, কারণ প্রত্যেকদিনই জোয়ারভাটা হয়।
✯ জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের অসুবিধা ঃ
জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা আছে সেই গুলি হল নিম্নরূপ -
01. জোয়ারের নোনাজলে এবং ঘোলা জলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সহজে নষ্ট হয়ে যায়।
02. নদীর বিস্তৃত মোহনায় বাঁধ দেওয়ার দরকার হয় বলে এর প্রারম্ভিক ব্যায় অনেক বেশি।
03. পর্যাপ্ত পরিমানে মূলধন না থাকলে এই শক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলা দুঃসাধ্য।
04. সবসময় জোয়ারভাটার বেগ সমান থাকে না, তাই অতি উন্নত মানের প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে বাঁধ দিতে হয় ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি বসাতে হয়, ফলে বহু অর্থব্যয় হয়।
05. সমুদ্রের ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে এইরকম শক্তি আহরণের ব্যবস্থা করা যায় না।
✯ বিশ্বে জোয়ারভাটা শক্তির উৎপাদন ঃ
জোয়ারভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত।
সমুদ্রজলের জোয়ারভাটার আধিক্যযুক্ত অঞ্চল মহাসাগরের দুই তীরে বেশি বলে এইরুপ অবস্থান লক্ষ করা যায়। তাছাড়া চিন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশেও এই শক্তির ব্যপারে অগ্রনী হয়েছে।
বিশ্বের কয়েকটি প্রধান জোয়ারভাটা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র ও তাদের উৎপাদন ক্ষমতার তালিকা ২০১০ সালের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নীচে দেওয়া হল -
এই গুলি ছাড়াও অন্যান্য জোয়ার ভাটা শক্তি কেন্দ্র হল কানাডার কোবসকুক , আমহাস্ট পয়েন্ট , চীনের বৈশাকু জিয়াংশিয়া , আর্জেন্টিনার সানজোস প্রভৃতি।
উৎপাদন কেন্দ্রের নাম | দেশের নাম | উৎপাদন ক্ষমতা |
---|---|---|
সিহওয়া হ্রদ বিদ্যুৎকেন্দ্র | দক্ষিণ কোরিয়া | ২৫৪ মেগাওয়াট |
লা রান্স বিদ্যুৎকেন্দ্র | ফ্রান্স | ২৪০ মেগাওয়াট |
অ্যানাপোলিয়া রয়াল বিদ্যুৎকেন্দ্র | কানাডা | ২০ মেগাওয়াট |
জিয়াংঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র | চীন | ৩.২ মেগাওয়াট |
কিসলায়া গুবা বিদ্যুৎকেন্দ্র | রাশিয়া | ১.৭ মেগাওয়াট |
উলদোলমোক বিদ্যুৎকেন্দ্র | দক্ষিণ কোরিয়া | ১.৫ মেগাওয়াট |
স্ট্র্যাংফোর্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র | ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য | ১.২ মেগাওয়াট |
আমরা আজকে সংক্ষিপ্ত আকারে জোয়ারভাটা এবং জোয়ারভাটার শক্তি উৎপাদন সম্পর্কে জানলাম, তোমাদের পোস্টটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আর এই রকম সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট গুলি সবার আগে পেতে আমাদের সাইটের উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম ও Whatsapp চ্যানেলে জয়েন হয়ে যাও। ধন্যবাদ , তোমার দিনটি শুভ হোক।
আরও পড়ুন - বায়ুমণ্ডলের স্তর বিন্যাস
No comments:
Post a Comment