নানা সংক্রামক রোগ PDF || Infectious diseases
বন্ধুগন,
বর্তমান সময়ে আমরা এখনও করোনার মতো মহামারিকে দূরে সরাতে পারিনি, করোনা ছাড়াও অনেক রোগ আমাদের পরিবেশের মধ্যে আছে, আমাদের সেই সব সংক্রামক রোগ গুলি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত, যেটা আমাদের জীবনকে রক্ষ্যা করবে। শুধু আমাদের জীবন নয় তার সঙ্গে আমাদের পরিবার , পাড়া, গ্রাম কেও রক্ষা করা যেতে পারে।
সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে, জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত রোগ গুলি সম্পর্কে যেগুলি মহামারি ডেকে আনে।
মহামারি
নানা কারনে মহামারি হয়, কোনো মরনরোগের প্রাদুর্ভাবে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ যখন একসঙ্গে মারা যায়, তখন ওই মরন রোগকে মহামারি বলে ঘোষণা করা হয়।
❏ মহামারির প্রকারভেদ ঃ
মহামারিকে সাধারণত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। সেই গুলি হল নিম্নরূপ - (১) সাধারণ উৎস মহামারি (২) সংক্রামক মহামারি (৩) অসংক্রামক রোগ ঘটিত মহামারি।
(১) সাধারণ উৎস মহামারি ঃ
এধরনের মহামারি কোনো রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর জন্য হতে পারে, আবার নাও হতে পারে জল, বায়ু , খাদ্য বা মাটির বিষক্রিয়াজনিত। (ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি বা জাপানের মিনামাটা রোগ)
(২) সংক্রামক মহামারি ঃ
এধরনের মহামারি সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে, কোনো বাহক প্রাণীর মাধ্যমে বা কোনো প্রাণীজ দেহ থেকে সংক্রামিত হতে পারে (হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া)
(৩) অসংক্রামক রোগ ঘটিত মহামারি ঃ
ফুসফুসের ক্যানসার, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি হল অসংক্রামক রোগ ঘটিত মহামারির উদাহরন।
❏ চক্রাকারে মহামারি ঃ
●● কোনো কোনো মহামারি জাতীয় রোগের আবির্ভাব চক্রাকারে হয়ে থাকে (দিন/সপ্তাহ/মাস/বছর)। হাম সাধারণত ২-৩ বছর অন্তর অন্তর আসে মহামারি রূপে। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জা ৭-১০ বছর অন্তর অন্তর মহামারি রূপে ফিরে আসত।
●● আবার কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি বা হ্রাসের প্রবনতা দেখে যায়। যেমন বিভিন্ন উন্নত দেশগুলিতে গত ৫০-৭০ বছর ধরে করোনারি হার্ট ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগ মাথা চারা দিয়ে বেড়েই চলেছে। আবার ওই সমস্ত দেশ গুলিতে যক্ষ্মা, টাইফয়েড, জ্বর, পোলিও-র মতো রোগের উপদ্রম কমার লক্ষণ দেখা গেছে।
●● কোনো কোনো মহামারির সঙ্গে আবার ঋতুর নিবিড় সম্পর্ক আছে। বসন্তের শুরুতে হাম, জলবসন্তের মতো রোগ বেশি করে হয়।
●● শীতের মাসগুলোতে শ্বাসনালীর উপরের অংশে সংক্রামনের ঘটনা বেশি ঘটে।
●● আবার গরমকালে পেটের সংক্রামক রোগ বেশি দেখা যায়।
বিভিন্ন সংক্রামক রোগ
✎ কলেরা ঃ
● রোগের ধরন ঃ কলেরা ভিব্রিও কলেরা (Vibrio Cholerae) নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ।
● রোগের কারনঃ সাধারণত দূষিত জল, মাছি-বসা, না-ঢাকা খাবার এবং নোংরা পরিবেশ থেকেই এই রোগের সৃষ্টি হয়। আবার আক্রান্ত রোগীর মলের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
● রোগের লক্ষণ ঃ ঘনঘন পাতলা পায়খানা, বমি, পায়ের শিরটান, শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে গেলে জল শূন্যতা ও শক দেখা দিতে পারে।
✎ ম্যালেরিয়া ঃ
● রোগের ধরন ঃ ম্যালেরিয়া কথাটির অর্থ হল খারাপ বায়ু । এটি একটি মশাবাহিত এবং ভাইরাস ঘটিত রোগ।
● রোগের কারনঃ স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামরে মানুষ আক্রান্ত হয়। যার মূলে আছে Plasmodium Vivax বা Plasmodium Falciparum নামক অণুজীব।
● রোগের লক্ষণ ঃ অত্যাধিক জ্বর ও শারীরিক ব্যাথা। অন্যান্য উপসর্গগুলি হল মাথাব্যাথা, ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর, জণ্ডিস, বমি হওয়া, গাঁটে ব্যাথা, খিঁচুনি, রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কাঁপুনি ও ইউরিনে হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি।
✎ ডেঙ্গি ঃ
● রোগের ধরন ঃ এটি একটি মশাবাহিত এবং ভাইরাস ঘটিত রোগ।
● রোগের কারনঃ একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস (Dengue Virus) জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এই রোগ ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত মশা বাহিত এক সূত্রক (RNA) ভাইরাস ঘটিত রোগ ।
● রোগের লক্ষণ ঃ রক্তক্ষরণ হল এই রোগের প্রধান উপসর্গ। তাছাড়া ভয়াবহ জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, গাঁটে গাঁটে ব্যথার এই রোগের লক্ষণ।
✎ প্লেগ ঃ
● রোগের ধরন ঃ প্লেগ একটি জীবনঘাতী ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা Yersinia pestis নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট।
● রোগের কারনঃ নানাভাবে এই রোগটি সংক্রামিত হতে পারে। সাধারণত Xenopsylla Cheopis নামক মাছি প্লেগ রগে আক্রান্ত ইঁদুরের দেহ থেকে ব্যাকটেরিয়ার বহন করে কোনো মানুষকে কামরায় বা তার খাবারে বসে তাছাড়া ওই ব্যক্তির হাঁচির মাধ্যমে, সরাসরি শরীরের ছোঁয়ায়, দূষিত মাটির স্পর্শে, বাতাস থেকে এমনকি কিছু পতঙ্গের কামড়েও এই রোগ ছড়াতে পারে।
● রোগের লক্ষণ ঃ ফুসফুসে সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ, লসিকাগ্রন্থি ফুলে গিয়ে ভয়াবহ যন্ত্রণা, মাথার যন্ত্রণা, বমি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া এই রোগের প্রধান উপসর্গ।
✎ কালাজ্বর ঃ
● রোগের ধরন ঃ কালাজ্বরের আরেক নাম দমদম জ্বর। লিশম্যানিয়া নামক প্রটোজোয়া বা আদ্যপ্রানীর আক্রমনে এই রোগ হয়।
● রোগের কারনঃ কালা জ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস (ইংরেজি: Visceral leishmaniasis, Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever) একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবী এই রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড় দ্বারা এটি বিস্তার লাভ করে।
● রোগের লক্ষণ ঃ ধারাবাহিক জ্বর, খিদে কমে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, প্লীহা বড়ো হয়ে যাওয়া, অ্যানিমিয়া প্রভৃতি এরসেরটেরিয়া ঘটিত বায়ুবাহিত রোগ।
● রোগের কারনঃ মাইকোব্যাকটেরিয়াল টিউবারকিউলোসিস নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে যক্ষ্মা হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের ফুসফুসকে আক্রমন করে। এই রোগ ভীষণ ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত রোগ। রোগীর কফ, কাশি এমনকি থুতু ও লালার মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে।
● রোগের লক্ষণ ঃ ভয়াবহ কাশি ও তার সঙ্গে রক্ত পড়া, রাতের দিকে কষ্ট বাড়ে, প্রচণ্ড ঘাম হয়, ওজন ক্রমশ কমতে থাকে।
✎ এইডস (AIDS) ঃ
● রোগের ধরন ঃ AIDS - Acquired Immuno Deficiency Syndrome রোগটি একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ।
● রোগের কারনঃ HIV ভাইরাসের ফলে মানবদেহে এইডস সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (Human Immunodeficiency Virus) - ই সৃষ্টি করে অ্যাকোয়াড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোমের (Acquired Immunodeficiency Syndrome)। যার ফলে এই রোগের সৃষ্টি হয়।
● সংক্রামনের মাধ্যম ঃ রক্তের মাধ্যমে, দেহরসের মাধ্যমে, লালার মাধ্যমে দ্রুত চড়িয়ে পড়ে এই রোগ।
● রোগের লক্ষণ ঃ এই রোগের ফলে ব্যক্তির মধ্যে অন্যান্য রোগগুলি আক্রান্ত হতে শুরু করে যেমন - যক্ষ্মা, ডায়ারিয়া, জ্বর, যন্ত্রণা, গলা ব্যথা থেকে শুরু করে দ্রুত ওজন হ্রাস পেয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
আজকে আমরা জানলাম, শিখলাম এবং সচেতন হলাম কীভাবে বিভিন্ন ক্ষতিকারক সংক্রামক রোগগুলি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেই গুলি থেকে। তাই এই পোস্টটি পড়ার সাথে সাথে আমাদের খুবি সচেতনতার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হবে।
নানা সংক্রামক রোগ PDF টি সংগ্রহ করতে নীচের Download Now-লেখায় ক্লিক করুন
File Details ::
File Name: নানা সংক্রামক রোগ
File Format: PDF
No. of Pages: 04
File Size: 261 KB
Khub valo
ReplyDeletedfgv
ReplyDelete