।।পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারন ও ফলাফল ।।
আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে । আলোচনা করবো মন্বন্তরের কারন , ফলাফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে । জাতে করে আপনারা অতি সহজেই পঞ্চাশের মন্বন্তর বিষয়টি জানতে পারেন , আসুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।
।। সূচনা ।।
➣ভারতে প্রাক স্বাধীনতা কালে যে সমস্ত দুর্ভিক্ষ হয় , সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক বিপর্যয়কারী দুর্ভিক্ষ ছিল , ১৯৪৩ শের বাংলার দুর্ভিক্ষ । বাংলার অর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এই দুর্ভিক্ষের প্রভাব ছিল খুবই মারাত্মক । ১৩৫০ বঙ্গাব্দে এই দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয় বলে এই দুর্ভিক্ষ পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত ।
।। কারন ।।
➣খাদ্যশস্যের উতপাদন হ্রাস ঃ- ১৯৪০-৪৩ খ্রিঃ মধ্যে ঘূর্ণিঝড় অত্যাধিক বৃষ্টি ধানের মড়ক উৎপাদিত শস্যের ঘাটতি ইত্যাদির ফলে খাদ্যশস্যের পরিমাণ হ্রাস পায় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওই বছর ৪৫০ বর্গমাইল এলাকার শস্য নষ্ট হয়ে যায় ।
➣রোগাক্রান্ত কৃষি ঃ- ব্রাউন স্পট নামক একধরনের ধসা রোগের আবির্ভাব হয় যা ধান গাছকে নষ্ট করে দেয় । ফলে ৫০-৯০ শতাংশ বিভিন্ন প্রজাতির ধান নষ্ট হয়ে যায় , যা খাদ্য সংকটকে চরমরূপে প্রদান করে ।
➣কৃষি পন্যের মুল্য বৃদ্ধি ঃ- ১৯৪১ খ্রিঃ থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিজাত দ্রবের মুল্যবৃদ্ধি হতে থাকে অন্যদিকে অকৃষিজাত পন্যের মুল্য সমপরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি , এ সময় কলকাতায় চালের দাম দ্বিগুণ হয় যা মন্বন্তরকে প্রকট করে তোলে ।
➣কালোবাজারি ও মজুরদারি ঃ- ১৯৪২ খ্রিঃ বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মজুরদারি ও কালোবাজারি বেড়ে যায় । উৎপাদকরা ভয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য ভবিষ্যতের জন্য মজুত করতে থাকে অন্যদিকে ব্যবসায়ী শ্রেণী বেশি দামের লোভে কালোবাজারি শুরু করে ।
➣পরিবহন ব্যাবস্থার বিপর্যয় ঃ- ভারতে জাপানি আক্রমন ঘটলে ব্রিটিশ সরকারে ২৬ হাজারের বেশি নৌকা নষ্ট করে দেয় এবং ২০ হাজার নৌকা অন্যত্র সরিয়ে দেয় ফলে খাদ্য পরিবহনে সংকট দেখা দেয় ।
➣সকারের উদ্যোগের অভাবঃ- মজুরদারি ও কালোবাজারি বন্ধ করতে সরকার বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি বাংলার দরিদ্র মানুষ প্রথম দিকে সর্বস্ব বিক্রি করে খাদ্য শস্য কিনলেও কিছু দিন পর তা আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায় তাই ওয়াভেল চার্চিলকে একটি পত্র দ্বারা জানায় এই দুর্ভিক্ষ শুধু প্রাকৃতিক নয় মানুষের সৃষ্টি ।
➣চার্চিলের ভুমিকা ঃ- ডঃ মধুশ্রী মুখার্জি '' চার্চিল Secret War '' নামে একটি গ্রন্থে তিনি বলেন এই মন্বন্তরের জন্য ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী চার্চিলকে সরাসরি দায়ী করেছেন কারন বাংলার চরম দুর্যোগের দিনে অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা , কানাডা প্রভৃতি দেশে খাদ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তার এরুপ অমানবিক মনোভাবের ফলে বাংলার খাদ্য আমদানি সম্ভব হয়নি ।
।।ফলাফল।।
➣মানব সম্পদের অবক্ষয় ঃ- ১৯৪৩ খ্রিঃ দুর্ভিক্ষে বাংলার মোট জন সংখ্যার প্রায় ৪ মিলিয়ন লোক ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা যায় । অমর্ত্য সেনের মতে এই দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় তবে কারিগর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মৃতের সংখ্যা ছিল বেশি ।
➣মানবিক বিপর্যয় ঃ- দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ খিদের জ্বালায় পশুর মাংস কীটপতঙ্গ লতাপাতা এমনকি দূর্বা ঘাস পর্যন্ত খেতে শুরু করে । বিজন ভট্টাচার্যের 'নবান্ন' নাটকে দেখা যায় , মানুষ কুকুরের সাথে ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট খাছে ।
➣সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঃ- দুর্ভিক্ষের পূর্বে এক বছরে গড়ে মাথা পিছু খাদ্যের পরিমাণ ছিল ১৪০ kg যা দুর্ভিক্ষের সময় নেমে আসে ৩০ kg তে ক্ষুধা নিবারনের জন্য পুত্র ও কন্য সন্তান বিক্রয় ও পতিতা বৃত্তি বৃদ্ধি পায় ।
➣অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঃ- পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলার অধিকাংশ মানুষের জীবনে চুরান্ত অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে । সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়ে গেলে নিঃস্ব হয়ে থালা বাটি হাতে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পরে ।
➣শিল্প সাহিত্য সৃষ্টি ঃ- সমসাময়িক কালে চিত্ত প্রসাদ রচিত হ্যাংরি বেঙ্গল , বিজন ভট্টাচার্যের নবান্ন নাটক , প্রভৃতি নাটক ও উপ্ন্যাস রচিত হয় । যা পঞ্চাশের মন্বন্তর সমসাময়িক কালে রচিত ।
➣উপসংহার ঃ- এই মনবন্তরের পর সরকার জন উড হেদের উদ্যগে দুর্ভিক্ষ কমিশন গঠন করে । তবে এই কমিশনের রিপোর্ট ছিল এক পেশা যা সরকারকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না ।
উপরিক্ত লেখাটির মাধ্যমে আমরা পঞ্চাশের মন্বন্তর সম্পর্কে সহজ ও সরল ভাবে জানতে পারলাম । লেখাটি কেমন লাগলো আপনাদের মতামত জানাবেন । ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment