ভারতে নৌবিদ্রোহ ।। Royal Indian Navy mutiny
আজকে আমরা জানবো ভারতের খুবি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে , আমরা জানবো ভারতে নৌবিদ্রোহ সম্পর্কে । আমরা জানবো বিদ্রোহের সূচনা , কারন , ফলাফল সম্পর্কে । যা আপনাদের সাধারন জ্ঞান বাড়াতে সাহায়্য করবে ।
➣ভুমিকা ঃ- ভারতের স্বাধীনতা আন্দলনের অন্তিম লগ্নের সর্বশেষে উল্লেখযোগ্য । আন্দোলন হল ১৯৪৬ খ্রিঃ নৌবিদ্রোহ । আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের পর ভারতীয় নাবিকদের অভ্যথান ও প্রতিবাদ ভার জাতীয় আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে , মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনী দত্তের মধ্যে নৌবিদ্রোহ ভারতে ইতিহাসে এক নব্জুগের সুচনা করে ।
➣নৌবিদ্রোহের সূচনা➣
➣১৯৪৬ খ্রিঃ ১৮ই ফেব্রুয়ারি মুম্বাই তলোয়ার যুদ্ধে ১৫০০ নাবিক বিদ্রোহের সূচনা করে , বিদ্রোহীরা জাহাজের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে , এবং তারা রয়েল ইন্দিয়ান নেভি -র নামে বদলে, "ইন্দিয়ান ন্যাশনাল নেভি"-
➣প্রসার বা ব্যাক্তি ঃ- ১৯টি বন্দের ২০ হাজার নাবিক ও করমি বিদ্রোহের , ক্রমে করাচী , কলকাতা , মাদ্রাজ , কোচিন , চট্টগ্রাম , বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি স্থানে বিদ্রোহে ছাড়িয়ে পড়ে , ১০ লক্ষ শ্রমিক ২২ ফেব্রুয়ারি , মুম্বাই ধর্মঘটে যোগদান করে , পুলিশ ধর্মঘটীদের উপর গুলি চালালে রাজপথ রক্তাত্ব হয়ে উঠে , বিদ্রোহীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংক , পোস্ট অফিস , পুলিশ , সামরিক বাহিনী ৪০ টি লড়ি ধ্বংস করে । এই সংঘর্ষ প্রায় ৩০০ লোক নিহত ২০০০ লোক আহত হয় ।
➣সরকারী দমননীতি ঃ- বিদ্রোহের দুর্বার গতি লক্ষ করে অ্যাডমিরাল গডফ্রে বিদ্রোহীর উদ্দেশ্যে একটি রাতা পাঠায় , যেখানে বলা হয় । বিদ্রোহীরা বিদ্রোহের অবসান না ঘটালে তাদের উপর বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হবে । এমতবস্থায় ব্রিটিশ সেনা বাহিনী বিদ্রোহীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । টানা ৭ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর মুম্বাইয়ের রাজপথ রক্তাক্ত রণক্ষেত্রে পরিনত হয় । তবে শেষ পর্যন্ত ২৩শে ফেব্রুয়ারি এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে ।
➣জাতিয়নেতাদের ভুমিকা ঃ- নৌবাহিনীরা আশা করেছিলেন । জাতীয় নেতারা তাদের সাহায্য করবে । কেবলমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি ও সমাজতন্ত্রী দল তাদের সমর্থন জানায় । অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নৌবাহিনী এই আন্দোলনে গান্ধিজির নাবিকদের কাছে ভারতীয় পক্ষে একটি অশুভ ও অশোভন দৃষ্টান্ত বলে নির্মাণ করেন । জিন্নার মতে নৌবিদ্রোহ একটি অসময়চিত ও দায়িত্ব জানহীন কাণ্ড বলেছেন । শেষ পর্যন্ত সদার বল্লভভাই প্যাটেল উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতা করিয়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করান ২৫শে ফেব্রুয়ারি ।
➣কারন➣
➣ নৌবিদ্রোহ কোনো আকর্ষিক ঘটনা ছিল না , কিন্তু এর পেছনে বেশকিছু কারন দায়ী ছিল , যথা - বর্ণ বৈষম্যের জন্য ভারতীয়দের ঘৃণা অবগ্রাস স্বীকার করা হত । ভারতীয় নৌসেনাদের তুলনায় ইংরেজ দৈর বেতন ছিল অনেক বেশি যোগ্যতা থাকার সত্ত্বেও ভারতীয় নাগরিকদের পদনতি হত না । ভারতীয় নাগরিকদের নিম্ন মানের খাবার সংগ্রহ করা হত । এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব , অভ্যন্তরীণ ঘটনা গুলির প্রভাব , আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রভাব, যা ভারতীয় নৌসেনাদের বিদ্রোহ করতে বাধ্য করে -
➣সেনাদের পদচ্যুতি ঃ- ১৯৩৯ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে প্রচুর ভারতিয়কে নৌবাহিনীতে নিয়োগ করা হয় , কিন্তু যুদ্ধের পর অতিরিক্ত সেনার প্রয়োজন না থাকায় সরকার বহু সেনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে । এতে তারা বেকার হয়ে যায় । এর ফলে নৌবাহিনীতে ক্ষোভের সঞ্চার হয় ।
➣বিশ্ব-পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারনালাভ ঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌসেনার বিদেশের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করে । বিদেশের পরিস্থিতির দ্বারা ভারতীয় সেনারা প্রভাবিত হলে এদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ বেড়ে যায় ।
➣প্রত্যক্ষকারন ঃ- অ্যাডমিরাল গডফ্রে তলোয়ার নামক যুদ্ধ জাহাজটি পরিদর্শন করতে এলে ভারতীয় নৌকর্মচারীরা জাহাজের গায়ে , ইংরেজ ভারত ছাড়ো , জয়হিন্দ প্রভৃতি ধ্বনি লিখে রাখেন , ফলে ব্রিটিশরা বলাই দত্তকে গ্রেফতার করলে ১৯৪৬ খ্রিঃ ১৮ই ফেব্রুয়ারি নৌবিদ্রোহের সূচনা হয় ।
➣গুরুত্ব➣
➣ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা ঃ- নৌবিদ্রোহ যে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুর ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই , ভারতীয় সেনাদের উপর নির্ভর করে আর যে ভারত শাসন করা সম্ভব নয় , এ কথা ব্রিটিশ সরকার স্পষ্ট বুঝতে পারে , এককথায় , এই বিদ্রোহ ভারত ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করে ।
➣মন্ত্রী মিশনের আগমন ঃ- নৌবিদ্রোহের ফলে আতঙ্কিত ইংরেজ সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হাস্তান্তরের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠায় । ১৮ই ফেব্রুয়ারি নৌবিদ্রোহ শুরু হয় এবং পরের দিন ভারতে মন্ত্রী মিশন পাঠানোর কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় ।
➣ভারত ত্যাগের ভাবনা ঃ- কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন , নৌবিদ্রোহ ভারতীয় সেনা ও সাধারন মানুষের রক্ত এক অভিন্ন আদেশ একসঙ্গে মিশে যায় । ভারতে এরুপ আরও একটি বিদ্রোহ শুরু হলে তার পরিনাম যে কি ভয়ংকর হবে তা বুঝতে পেরে ব্রিটিশ সরকার ভারত ত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করে ।
⬛ উপরিউক্ত লেখাটি থেকে আমরা অতি সহজ এবং সুন্দর ভাবে নৌবিদ্রোহের সম্পূর্ণ বিষয়টি জানতে পারলাম । আপনাদের লেখাটি কেমন লাগলো অবশ্যই আপনাদের মতামত জানবেন । এবং আপনাদের যদি কোনো নোটের প্রয়োজন হয় সেটাও জানাবেন , আমরা যথাযথ চেষ্টা করবো আপনাদের সাহায্য করার । ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment