।। স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ।।
![]() |
স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ।। |
ডিয়ার ভিসিটর,
আজকে আমরা জানবো স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান । সুভাসচন্দ্র এমন একটা ব্যাক্তিত্ব যার নাম সুনলেই আমাদের যুব সমাজের মনে প্রতিবাদি মনভাবের সাহস জেগে ওঠে । যার জীবনী ও সংগ্রামের ইতিহাস আজও যুব সমাজকে উৎসাহিত করে । তাই আর দেরি না করে আসুন জেনে নিই সুভাসচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতি কথা -
⩥ ১৯৪২ খ্রিঃ আগস্ট মাসে ভারতের যখন গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলছিল , ঠিক তার পরেই ১৯৪৩ খ্রিঃ অক্টোবরে মাসে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঝড় তোলে । সুভাসচন্দ্র অবদান গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল -
(১) সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগঃ-ঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত রক্ষক আইন দ্বারা সুভাষচন্দ্রকে নিজ গৃহে নজর বন্দি করে রাখা হয় । এমত অবস্থায় ১৯৪১ খ্রিঃ ১৭ই জানুয়ারি তিনি কলকাতা ত্যাগ করে কাবুলের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্থান হয়ে রাশিয়া পৌঁছান ।
(২) জার্মানিতে সুভাষচন্দ্রঃ- তিনি মস্কো থেকে ২৮শে মার্চ জার্মানিতে উপস্থিত হন । হিটলারের সহযোগীতায় ১৯৪২ খ্রিঃ আজাদ হিন্দ স্তান বেতার কেন্দ্রে স্থাপন করে । স্বাধীনতার জন্য প্রচার চালাতে থাকেন । জার্মানিতে বন্দি সৈন্যদের নিয়ে একটি সেনাদল গঠন করে । যারা তাঁকে নেতাজি বলে অভিবাদন করেন এবং জয় হিন্দ বলে অভ্যর্থনা জানান ।
(৩) আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব গ্রহনঃ- ১৯৪২ খ্রিঃ ১৫ই জুন রাসবিহারী বসুর সভাপতিত্বে ব্যাংককে প্রবাসী ভারতীয়দের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এই আন্দোলনে ফল স্বরূপ আনুষ্ঠানিক ভাবে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠিত হয় । ১৯৪৩ খ্রিঃ ২৫ শে আগস্ট সুভাসচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহন করেন । সেনাবাহিনীর পুনঃ গঠনের কাজে হাত দেন ।
(৪) আজাদ হিন্দ সরকার গঠনঃ- ১৯৪৩ খ্রিঃ ২১শে অক্টোবর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন এবং ২৩শে অক্টোবর এই সরকার ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে , জাপান , থাইল্যান্ড , জার্মানি , ইতালি প্রভৃতি নয়টি রাষ্ট্র এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয় । এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো আন্দামান ও নিকোবর দ্বিপপুঞ্জে দুটি আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেয় । ৩১শে ডিসেম্বর নেতাজি এই দুটি দ্বিপপুঞ্জের নাম রাখেন , "শহিদ ও স্বরাজ" দ্বীপ ।
(৫) দিল্লি চলো অভিজানঃ- ১৯৪৪ খ্রিঃ ৮ই জানুয়ারি রেঙ্গুনে নেতাজি সামরিক দপ্তর স্থাপন করার পর আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারত অভিজান শুরু করেন এবং ধ্বনি তুলেন , ''দিল্লি চলো"। এই বাহিনীর বীরবিক্রমে মিপুরের কোহিমা শহর ও রাজধানী ইম্ফল দখল করে , এছাড়া এই সেনাদল ভারতীয় এলাকার প্রায় ১৫০ মাইল ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করতে সক্ষম হন ।
(৬) আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মসমর্পণঃ- উক্ত সময়ে আমেরিকা , জাপান আক্রমন করলে জাপানি সেনাবাহিনী দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয় । এছাড়া নিদিষ্ট সময়ের পূর্বে বর্ষা শুরু হওয়ায় সৈন্যদের রসদ সরবরাহ করা সম্ভব ছিলনা , তাই ১৯৪৫ খ্রিঃ ১৫ই আগস্ট আজাদ হিন্দ বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং ওই বছরই ১৮ই আগস্ট নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় । অবশ্য এই কাহিনী সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে -
গুরুত্বঃ- জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য । যেমন ঃ-
(ক) প্রয়োজনীয় রসদের অভাব ও প্রবল বাধা বিঘ্ন সত্বেও তার ১৫০ মাইল এলাকা স্বাধীন করতে সক্ষম হয় ।
(খ) তাদের কার্যকলাপ ব্রিটিশদের বুজিয়েদেয় তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে ।
(গ) আজাদ হিন্দ বাহিনীর কার্যকলাপ দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার আশার সঞ্চার করে ছিল ।
(ঘ) আজাদ হিন্দ বাহিনীর দৃষ্টান্ত অনুসরন করে পরবর্তী কালে ১৯৪৬ খ্রিঃ নৌবিদ্রোহ শুরু হয় ।
(৭) রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ঃ- ছাত্র জীবন থেকে সুভাসচন্দ্র বসু ইংরেজ শাসন বিরোধী ছিলেন । তাই তিনি আই সি এস পরীক্ষায় চতুর্থস্থান অধিকার করে লোভনীয় চাকরি ত্যাগ করে দেশ মতাকে স্বাধীন করার জন্য দেশরঞ্জন চিত্ররঞ্জন দাসে অনুপ্রেরনা তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে ।
(৮) ফরওয়ার্ড ব্লক গঠনঃ- ১৯২০ খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলন , ১৯২৩ খ্রিঃ স্বরাজ দলে আন্দোলন , ১৯২৭ খ্রিঃ সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন , ১৯৩০ খ্রিঃ আইন অমান্য আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র বসু গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন । সেই করেন ১৯৩৮ খ্রিঃ তিনি ফরিপুরা কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয় । ১৯৩৯ খ্রিঃ দ্বিতীয় বা সভাপতি নির্বাচনে গান্ধীজী মনোনীত পট্টভি সীতা রামায়ানকে সভাপতি নির্বাচিত করেন । গান্ধিজির সাথে নেতাজির মনোমালিন্যের ফলে সুভাসচন্দ্র দলত্যাগ করেন । ১৯৩৯ খ্রিঃ ৩রা মে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন ।
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জেনে নিলাম নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিকথা । আশা করছি সহজ ও সুন্দর ভাবে আপনাদের সামনে সম্পূর্ণ বিষয়টি উপস্থাপন করতে পেরেছি । পোস্টটি কেমল লাগলো আপনাদের মতামত জানতে ভুলবেনা । ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment