Breaking




Saturday 12 August 2023

দেশাত্মবোধক কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || নজরুল ইসলাম || সুকান্ত ভট্টাচার্য || অতুল প্রসাদ সেন

দেশাত্মবোধক কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || নজরুল ইসলাম || সুকান্ত ভট্টাচার্য || অতুল প্রসাদ সেন

বিখ্যাত কবিদের দেশাত্মবোধক কবিতা সমূহ
বিখ্যাত কবিদের দেশাত্মবোধক কবিতা সমূহ
সুপ্রিয় ছাত্র ছাত্রী,
তোমরা যারা কোনো অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি করবে বলে ভাবছো কিন্তু কোন কবিতা আবৃতি করবে বুঝে উঠতে পারছোনা। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা নিয়ে হাজির হয়েছি, বিখ্যাত কবিদের দেশাত্মবোধক কবিতা সমূহ গুলি নিয়ে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || নজরুল ইসলাম || রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় || সুকান্ত ভট্টাচার্য || অতুল প্রসাদ সেন-এঁর মতো মহান মহান লেখকের কিছু জনপ্রিয় কবিতা গুলি। 
তার আর দেরি না করে তোমাদের যে কবিতাটি ভালো লাগবে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে নাও এবং প্রয়োজন হলে লিখে নিয়ে খুব ভালোভাবে মুখস্থ করে নাও। আর খুব ভালোভাবে বারবার প্র্যাকটিস করে তারপর মঞ্চে আবৃত্তি করবে। 
দেশাত্মবোধক কবিতা সমূহ

কান্ডারী হুশিয়ার!
        -কাজী নজরুল ইসলাম (সর্বহারা কাব্য)

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার 
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! 
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, 
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ ? 
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। 
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। 

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান! 
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান। 
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান, 
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার। 

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন 
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন। 
হিন্দু না ওরা মুসলিম ? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন ? 
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার 

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ, 
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ! 
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ ? 
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার! 

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, 
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর! 
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! 
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার। 

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, 
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান 
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ ? 
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

স্বাধীনতা হীনতায়
- রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (পদ্মিনী উপাখ্যান কাব্য)

স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
              কে বাঁচিতে চায় ?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
              কে পরিবে পায় |
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,
              নরকের প্রায়!
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গসুখ-তায় হে,
              স্বর্গসুখ তায়!
এ কথা যখন হয় মানসে উদয় হে,
              মানসে উদয়!
পাঠানের দাস হবে ক্ষত্রিয়-তনয় হে,
             ক্ষত্রিয়-তনয় ||
তখনি জ্বলিয়া উঠে হৃদয়-নিলয় হে,
             হৃদয়- নিলয় |
নিবাইতে সে অনল বিলম্ব কি সয় হে,
             বিলম্ব কি সয় ?
অই শুন! অই শুন! ভেরীর আওয়াজ হে,
             ভেরীর আওয়াজ |
সাজ সাজ সাজ বলে, সাজ সাজ সাজ হে,
              সাজ সাজ সাজ ||
চল চল চল সবে, সমর-সমাজে হে,
              সমর-সমাজ |
রাখহ পৈতৃক ধর্ম, ক্ষত্রিয়ের কাজ হে,
              ক্ষত্রিয়ের কাজ ||
আমাদের মাতৃভূমি রাজপুতানার হে,
              রাজপুতানার |
সকল শরীর ছুটে রুধিরের ধার হে,
              রুধিরের ধার ||
সার্থক জীবন আর বাহুবল তার হে,
              বাহুবল তার |
আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে,
              দেশের উদ্ধার ||
কৃতান্ত-কোমল কোলে আমাদ্র স্থান হে,
              আমাদের স্থান |
এসো তার মুখে সবে হইব শয়ান হে,
              হইব শয়ান ||
কে বলে শমন-সভা ভয়ের বিধান হে,
              ভয়ের বিধান ?
ক্ষত্রিয়ের জ্ঞাতি যম বেদের নিধান হে,
              বেদের নিধান ||
স্মরহ ইক্ষ্বাকু-বংশে কত বীরগণ হে,
              কত বীরগণ |
পরহিতে দেশ-হিতে ত্যাজিল জীবন হে,
              ত্যাজিল জীবন ||
স্মরহ তাঁদের সব কীর্তি-বিবরণ হে,
              কীর্তি বিবরণ!
বীরত্ব-বিমুখ কোন ক্ষত্রিয়-নন্দন হে?
              ক্ষত্রিয়-নন্দন ||
অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে,
               চল ত্বরা যাই |
দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে,
               তুল্য তার নাই ||
যদিও যবনে মারি চিতোর না পাই হে,
               চিতোর না পাই |
স্বর্গসুখে সুখী হব, এস সব ভাই হে,
               এসো সব ভাই ||   

আমার দেশ
- সুকান্ত ভট্টাচার্য

এ আকাশ, এ দিগন্ত, এই মাঠ, স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া মাটি,

সহস্র বছর ধ’রে একে আমি জানি পরিপাটি,

জানি এ আমার দেশ অজস্র ঐতিহ্য দিয়ে ঘেরা,

এখানে আমার রক্তে বেঁচে আছে পূর্বপুরুষেরা,

যদিও দলিত দেশ, তবু মুক্তির কথা কয় কানে,

যুগ যুগ আমরা যে বেঁচে থাকি পতনে উত্থানে।

যে চাষি কেটেছে ধান, এ মাটি নিয়েছে কবর,

এখনো আমার মধ্যে ভেসে আসে তাদের খবর।

অদৃশ্য তাদের স্বপ্নে সমাচ্ছন্ন এ দেশের ধুলি,

মাটিতে তাদের স্পর্শ, তাদের কেমন করে ভুলি ?

আমার সম্মুখে ক্ষেত, এ প্রান্তর উদয়াস্ত ঘাটি,

ভালবাসি এ দিগন্ত, স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া মাটি।

এখানে রক্তের দাগ রেখে গেছে চেঙ্গিস্, তৈমুর,

সে চিহ্নও মুছে দিল কতো উচ্চৈঃশ্রবাদের খুর।

কতো যুদ্ধ হয়ে গেছে, কতো রাজ্য হয়েছে উজাড়,

উর্বর করেছে মাটি কতো দিগ্বিজয়ীর হাড়।

তবুও অজেয় এই শতাব্দী- গ্ৰথিত হিন্দুস্থান,

এরই মধ্যে আমাদের বিচলিত স্বপ্নের সন্ধান।

আজন্ম দেখেছি আমি অদ্ভুত নতুন এক চোখে,

আমার বিশাল দেশ আসমুদ্র ভারতবর্ষকে।

বঙ্গমাতা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (চৈতালি কাব্যগ্রন্থ)

পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি, তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালোছেলে করে।
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।
শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক’রে।
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।

 ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী
- অতুল প্রসাদ সেন

উঠো গো ভারত-লক্ষ্মী,
উঠো আদি-জগত-জন-পূজ্যা,
উঠো গো ভারত-লক্ষ্মী,
উঠো আদি-জগত-জন-পূজ্যা,

দুঃখ দৈন্য সব নাশি,
করো দূরিত ভারত-লজ্জা।
ছাড়ো গো ছাড়ো শোকশয্যা,
কর সজ্জা
পুনঃ কনক-কমল-ধন-ধান্যে!

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

কাণ্ডারী নাহিক কমলা,
দুখলাঞ্ছিত ভারতবর্ষে;
শঙ্কিত মোরা সব যাত্রী,
কালসাগর-কম্পন-দর্শে।
তোমার অভয়-পদ-স্পর্শে, নব হর্ষে,
পুনঃ চলিবে তরণী শুভ লক্ষ্যে।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

ভারত-শ্মশান করো পূর্ণ,
পুনঃ কোকিল-কূজিত কুঞ্জে,
দ্বেষ-হিংসা করি চূর্ণ,
করো পূরিত প্রেম-অলি-গুঞ্জে,
দূরিত করো পাপ-পুঞ্জে তপঃ-তুঞ্জে,
পুনঃ বিমল করো ভারত পুণ্যে।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।

জননী গো, লহো তুলে বক্ষে,
সান্ত্বন-বাস দেহ তুলে চক্ষে;
কাঁদিছে তব চরণতলে
ত্রিংশতি কোটি নরনারী গো।


যারা স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বক্তব্য দেবে ভাবছো তারা নীচের লেখায় ক্লিক করো


স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বক্তব্য 

1 comment: