Breaking




Monday, 2 August 2021

অরন্য সৃষ্টির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ।।

।। অরন্য সৃষ্টির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ।। 

অরন্য সৃষ্টির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
অরন্য সৃষ্টির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
ডিয়ার ভিজিটার,
আমরা সকলেই জানি অরন্য আমাদের জীবনের সঙ্গে কতটা জড়িয়ে আছে বা অরন্যের উপর আমরা কতটা নির্ভরশীল তাই আমরা আজকে প্রাকৃতিক পরিবেষ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কে জানবো , আমরা জানবো অরন্য অর্থাৎ পৃথিবীতে গাছপালা সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ কীভাবে সাহায্য করছে । 

                    সুতরাং আর কোনো রকম সময় নষ্ট না করে , মূল বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক ........

।। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ।। 

অরন্য সম্পদ তথা গাছ পালা বেড়ে ওঠার পেছনে প্রাকৃতিক পরিবেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
যেসব প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাভাবিক উদ্ভিদের জন্ম ও বিকাশের এবং ভৌগোলিক বণ্টনে সাহায্য করে সেই গুলি নীচে আলোচনা করা হল ...
➢উষ্ণতা ঃ- উদ্ভিদের জন্ম ও বিকাশে উষ্ণতার প্রভাব খুবি বেশি , খুব কম উষ্ণতায় উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না । আবার খুব বেশি উষ্ণতায় (৪৫' C এর বেশি ) উদ্ভিদ বাঁচে না । উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য কমপক্ষে ৬' C তাপমাত্রা দরকার । অধিক উষ্ণতায় বাস্পিভবন বেশি হয় কিংবা কম উষ্ণতায় জলীয় বাষ্প বরফে পরিনত হয় । সাধারনত গড়ে ২৭' সে থেকে ৩২' সে উষ্ণতায় ক্রান্তীয় অরন্য , এবং গড়ে ১০' সে উষ্ণতায় সরলবর্গীয় অরন্য জন্মায় ।
➢আর্দ্রতা ঃ- বায়ুর আর্দ্রতা উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক , আমাজন অববাহিকায় সারাবছর উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে বলে এখানে উদ্ভিদের সংখ্যা ও ঘনত্ব বেশি ।
➢বৃষ্টিপাত ঃ- উদ্ভিদের বৃদ্ধি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল । প্রচুর বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ( বছরে গড়ে ১৫০ সেমির বেশি ) গাছপালা বেশি দীর্ঘ হয় এবং ঘন বনভুমি সৃষ্টি করে । যেমন নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরন্য । এছাড়া এই অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রাজাতির সংখ্যাও বেশি হয় । বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাসের সাথে সাথে গাছপালাগুলি ক্রমশ বেঁটে হতে থাকে ও কাঁটা ঝোপঝাড়ে পরিনত হয় । ঘন বনাঞ্চলের পরিবর্তে পাতলা বনভুমি সৃষ্টি করে মরু অঞ্চলে খুব কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় (বার্ষিক ১০ সেমির কম ) জেরোফাইট উদ্ভিদ জন্মায় ।
➢বায়ুপ্রবাহ ঃ-  বাতাসের প্রকৃতি ও বায়ুপ্রবাহের মাত্রার ওপর উদ্ভিদের বিকাশ অনেখানি নির্ভর করে । আর্দ্র ও হালকা বাতাস গাছের বেড়েওঠার সহায়ক । শুল্ক বাতাস জোরে প্রবাহিত হলে বাষ্পীভবনের মাত্রা বেড়ে যায় , গাছের বৃদ্ধি বাধা পায় । জলীয়বাষ্প পূর্ণ বাতাস গাছের বৃদ্ধির সহায়ক । এছাড়া বায়ুপ্রবাহে ফুলের পরাগ রেনু , বীজ অনেকদুর পর্যন্ত ছরিয়ে পড়ে । ফলে গাছের বংশবিস্তার হয় । ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ বেঁকে যায় , কুঁকড়ে যায় , ডালপালা ভেঙে যায় ।
➢সূর্যালোকঃ- সূর্যালোক ছাড়া উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না । কারন উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া অর্থাৎ উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুত সূর্যালোকের সাহায্যেই ঘটে থাকে । ঘন অরন্যে সূর্যকিরণ পাওয়ার জন্য উদ্ভিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে । সে কারনে পৃথিবীর কার্যকারী সূর্যালোকযুক্ত অঞ্চলগুলিতে বনভুমির বিস্তার ঘটেছে , কিন্তু কম সূর্যালোকিত স্থানগুলিতে উদ্ভিদের বিস্তার বেশি হয়নি । এজন্য তুন্দ্রা অঞ্চলে গুল্ম , ঝোপজাতীয় তৃণ জন্মায় ।
➢মাটি ঃ- স্বাভাবিক উদ্ভিদের জন্ম ও বৃষ্টিতে মাটির ভূমিকা অন্যান্য উপাদানসমুহের সাপেক্ষে কম । তবে মাটিতে পটাশিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , নাইট্রোজেন ইত্যাদি পুষ্টিমৌল থাকে , উদ্ভিদ সেগুলিকে খাদ্যের জন্য গ্রহন করে । এছাড়া , গাছ মাটির অনেক গভীরে শিকড় বিস্তার করে মাটিকে আঁকরে দাঁড়িয়ে থাকে । বস্তুত , স্বাভাবিক উদ্ভিদ মাটি গঠনকে প্রভাবিত করে ।
➢ভূপ্রকৃতি ঃ- ভুমির উচ্চতা স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিকাশে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রন করে । উচ্চতা বাড়লে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা কমে যায় , যার প্রভাব উদ্ভিদের ওপর পড়ে । এজন্য পর্বতের পাদদেশীয় অংশ থেকে উচ্চ এলাকা পর্যন্ত স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিস্তারের পার্থক্য দেখা যায় । যেমন প্রায় ১০০০ মি উচ্চতা পর্যন্ত শক্ত কাঠের চিরহরিৎ গাছ জন্মায় , প্রায় ১০০০-৩০০০ মি উচ্চতায় পাইন ও মিশ্র অরন্য দেখা যায় । ৩০০০-৪০০০ মি উচ্চতায় নরম কাঠের সরলবর্গীয় গাছ জন্মায় এবং ৪০০০ মি বেশি হিমরেখা পর্যন্ত আল্পিয় গাছ ও তৃণ জন্মায় । 
➢জোয়ার-ভাটাঃ- সমুদ্র উপকূলে , নদী মোহানার অঞ্চলগুলিতে জোয়ার ভাটার প্রভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড , ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড যুক্ত অজৈব লবনের লবনাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায় । ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ উপকুলের বা মোহনার পরিবেশের সঙ্গে অতি দক্ষতার সঙ্গে সুন্দরভাবে অভিযোজন ঘটিয়েছে । গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র - বদ্বিপের মোহানায় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ( সুন্দরী , গোঁওয়া , গরান , হেঁতাল ইত্যাদি ) জন্মায় ।
।। অরন্যের উপকারিতা ।।
 বনভূমি থেকে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকার পাই । অরন্যের প্রত্যক্ষ উপকারিতা যা একে ব্যবহারের মাধ্যমে পাই এবং এটি অর্থনৈতিক গুরুত্ব বলে পরিচিত । অরন্যের অর্থনৈতিক গুরুত্বের মাত্রা নির্ভর করে অরন্যকে কাজে লাগানোর উপর । মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াও অরন্য আমাদের নানাভাবে উপকার করে যা পরোক্ষ উপকার বলে পরিচিত । এগুলি হল ---
       জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক ।
      ● মাটির ক্ষয় রোধ ।
      ● মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ।
      ● পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ।
      ● মরুভূমির প্রসার রোধ ।
      ● বন্যার সম্ভবনা রোধ ।
      ● ঝড়ের গতিবেগ নিয়ন্ত্রন ।
      ● জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি ।

  আজকে আমরা জানলাম অরন্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রকৃতি কীভাবে সাহায্য করে । আশাকরছি বিষয়টি জানার পর আমরা মানে মনুষ্য সমাজ অরন্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারবো । আপনাদের বিষয়টি পড়ে কেমন লাগলো আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন । আর যদি এই রকম সুন্দর সুন্দর পোস্টগুলি সবার আগে পেতে চান সাইটের উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম এবং Whatsapp এর লিঙ্কে ক্লিক করে জয়েন হয়ে যান ধন্যবাদ , আপনার দিনটি শুভ হোক

No comments:

Post a Comment