একনজরে লোকসভার স্পিকার ।। Lok Sabha Speaker
ডিয়ার ভিসিটর,
আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো লোকসভার স্পিকার সম্পর্কে । আমরা অনেকই আছি যারা লোকসভার স্পিকার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানিনা , স্পিকারের কি কি ক্ষমতা ,স্পিকার কিভাবে নিযুক্ত হন,কিভাবে পদচ্যুতি হয় ইত্যাদি , তাই আর দেরি না করে চলুন পরে নিই স্পিকার সম্পকে ।
ভুমিকা
ভারতের স্পিকারের ভুমিকা সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় খুবি গুরুত্বপূর্ণ । লোকসভা নির্বাচনের পর নব গঠিত সভার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে থেকে এক জনকে স্পিকার নির্বাচন করেন (৯৩ নং ধারা) । স্পিকারের ক্ষমতার উৎস হল ভারতের সংবিধান এবং লোকসভার কাজকর্ম পরিচালনার বিধি । লোকসভার সভাপতি হিসাবে স্পিকার সমগ্র জাতি স্বাধীনতার প্রতীক , স্পিকারের কোন সিদ্ধান্তকে আদালতে আপিল করা যায় না । নিম্নে স্পিকারের প্রধান কাজ গুলি আলোচনা করা হল ।
ক্ষমতা ও কার্যাবলী
আমরা এখন স্পিকারের ক্ষমতা ও কাজ গুলি সম্পর্কে জানবো , তার সঙ্গে জানবো স্পিকারের কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আছে ---
১} প্রশাসনিক কার্য ঃ- সভায় কোন কোন প্রস্তাব উপস্থাপন হবে , কি ধরনের প্রশ্ন করা হবে , কোন সংশোধনী প্রস্তাব বৈধ কিনা , কোন কোন নোটিশ আলোচনার জন্য গ্রহন করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চুরান্ত।
২}সভার শান্তি রক্ষা করা ঃ- (ক) সভায় বক্তিতা দেবার ব্যাপারে এবং দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য সদস্যদের অবশ্যই স্পিকারের কাছে অনুমতি নিতে হয় ।
(খ) সদস্যদের বক্তব্য একই বিষয়ে রিপিট ও অপ্রাসঙ্গিক বা অশালীন মন্তব্য এবং আপত্তিকর আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রতি স্পিকারের বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখে ।
(গ) লোকসভায় খারপ আচরণ করলে স্পিকার সাময়িক ভাবে সভা মুলতুবি করে দিতে পারে।
৩} লোকসভার সদস্যদের আধিকার রক্ষা ঃ- (ক) সদস্যদের আধিকার ভঙ্গ বা লোকসভার অবমাননার দায়ে তিনি যে কোন ব্যেক্তি বা সাংসদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে ।
(খ) লোকসভার অবমাননার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাংসদকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে ।
(গ) স্পিকারের অনুমতি ছাড়া লোকসভায় কোন সদস্যকে সভার ভেতর থেকে গ্রেফতার করা যায় না ।
৪} অর্থবিল সংক্রান্ত ক্ষমতা ঃ- কোন বিল অর্থবিল কিনা তা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্পিকারের সিদ্ধান্ত চুরান্ত । তাছাড়া লোকসভায় আনুমদনের পর অর্থবিলটিকে যখন রাজ্য সভায় পাঠানো হয় তখন বিলটি যে একটি অর্থবিল সে সম্পর্কে স্পিকার একটি প্রমান পত্র দিয়ে থাকে ।
৫} লোকসভা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষাঃ- লোকসভা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে স্পিকার সংযোগ রক্ষা করে থাকেন । রাস্ত্রপতির দেওয়া বানী , বক্তব্য , বার্তা ইত্যাদি স্পিকার নিজে লোকসভায় উপস্থাপন করেন । আন্যদিকে আবার রাষ্ট্রপতির কাছে লোকসভার বক্তব্য স্পিকারের মাধ্যমে পেশ করা হয় ।
৬} কোরাম সম্পর্কিত আলোচনা ঃ- লোকসভায় কোরাম না হলে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য উপস্থিত না থাকলে ১/১০ অংশ । তিনি সভার কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে পারেন ।
৭} গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ঃ- যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সদস্যদের অবহিত করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে স্পিকার সভায় আলোচনা করতে পারে । তাছাড়া কোন সদস্য যদি হিন্দি না ইংরাজি ভাসায় বক্তব্য না দিতে পারলে তাকে তার মাতৃ ভাসায় বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি দিতে পারে ।
৮} যৌথ আধিবেশনের সভাপতিত্ব করা ঃ- সভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশের স্পিকার সভাপতিত্ব করেন তাঁর নির্দেশে মতে যৌথ অধিবেশনের কাজ স্থির হয় ও প্রযুক্ত হয় ।
৯} ভোটদান সম্পর্কিত ক্ষমতা ঃ- লোকসভায় কোন ব্যাপারে ভোট গ্রহন করা হলে যদি পক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পরে তাহলে তিনি একটি নির্ণায়ক ভোট দিয়ে অচল অবস্থার অবসান ঘটাতে পারেন ।
১০} সদস্যপত্র খারিজঃ- সদস্যদের পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছেই জমা দিতে হয় দলত্যাগ বিরোধী আইন অমান্য করলে অভিযুক্ত সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের আছে ।
স্পিকারের পদমর্যাদা
ভারতের সংবিধানে স্পিকারের পদটিকে যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । সংবিধান রচয়িতারা স্পিকারের পদটিকে যতটা সম্ভব স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন , সংসধিয় গনতন্ত্রের ক্ষমতাশীল দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা আছে । স্পিকারের নিরপেক্ষতা বিরোধী দলকে উপযুক্ত ভুমিকা পালনের সুযোগ দেয় । স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে সভা পরিচালনা করে স্পিকারের বিরুধে দলগুলি আস্থা অর্জন করতে হয়।
উপসংহার
আসলঅর্থে লোকসভার সভাপতি হিসাবে স্পিকারের পদকে অবশ্যই ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের অত্যন্ত অপরিহার্য হিসাবে অভিহিত করা হয় । লোকসভার অভিভাবক রুপে তাঁর সদর্থক ভুমিকার উপর ভালো সংসদীয় বারতাবরন গড়ে ওঠার বিষয়টি নির্ভরশীল ।
No comments:
Post a Comment