Breaking




Saturday 7 October 2023

ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার (১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারা)

ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার (১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারা)

ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার
ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার
বন্ধুগন,
আজকে আমরা পড়াশোনা করবো ভারতের নগরিকদের অর্থাৎ আমাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে। আমরা ভারতীয় হিসাবে কি কি অধিকার ভোগ করি বা কোন কোন অধিকার ভোগ করতে পারিনা। আমরা আজকে পড়বো আমাদের কতগুলি মৌলিক অধিকার আছে , আমরা সেই গুলির দ্বারা কি কি সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি বা পেতে পারি। আসুন আর সময় নষ্ট না করে জেনে নিই ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলি সম্পর্কে।

মৌলিক ধারনা 
 ➣মৌলিক অধিকারের ধারনা গৃহীত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে। এই ধারনা গ্রহনের মূল উদ্দেশ্য ভারতীয় নাগরিকদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করা। যদিও এই অধিকারগুলি অবাধ নয়। বৃহত্তম স্বার্থে কিংবা বিশেষ অবস্থায় এই অধিকারগুলি আংশিক বা পূর্ণরূপে প্রত্যাহৃত হতে পারে। বৃহত্তম স্বার্থে এই অধিকারগুলির ওপর আরোপিত হতে পারে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রন, কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রনের বৈধতা নির্ণয়ের অধিকার ভারতীয় সংবিধান প্রদান করেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট গুলিকে। 
ভারতীয় সংবিধানের পার্ট থ্রি ' র অন্তর্গত ১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কয়েকটি মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সংবিধান। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি, ভারতীয় সংবিধান যখন কার্যকর হয়, তখন ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ছিল - সাত১৯৭৮ সালে, সংবিধানের ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী মাধ্যম, "সম্মত্তির অধিকার' কে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে মৌলিক অধিকারের সংখ্যা হয় ৬। ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের স্কন্ধে। যদি কোনও নাগরিকের কোনও মৌলিক অধিকার খর্ব হয় বা তা হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয় তাহলে তিনি বিচারের জন্য সরাসরি হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। যদি সেই আবেদন যথার্থ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে খর্ব হওয়া মৌলিক অধিকার পুনরুদ্বারের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট রিট জারি করে। মৌলিক ধারনাগুলি হল নিম্নরূপ ---

মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ
সাম্যের অধিকার অনুচ্ছেদ ১৪ - ১৮
স্বাধীনতার অধিকার অনুচ্ছেদ ১৯ - ২২
শোষণের বিরুধে অধিকার অনুচ্ছেদ ২৩ ও ২৪
ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার অনুচ্ছেদ ২৫ - ২৮
সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার অনুচ্ছেদ ২৯ ও ৩০
শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার অনুচ্ছেদ ৩২ - ৩৫

 সাম্যের অধিকার (১৪ - ১৮ নং ধারা)

  ➣ভারতীয় আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান। সকলের জন্য এক আইন , অর্থাৎ আইন ভঙ্গ করলে সবার জন্য একই শাস্তি এবং আইনের সুরক্ষালাভের সুযোগও সবার জন্য একইরকম। ধর্ম, জাতি, গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, জনস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে অতিরিক্ত সুযোগদান অথবা একই ভিত্তিতে কারও প্রতি কোনও বৈষম্যমূলক আচরণের অধিকার নেই ভারতীয় প্রশাসনের। 
যদিও শিশু ও মহিলাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা বা তফশিল জাতি ও উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণের বিষয় ভারতীয় সংবিধানসম্মত।

স্বাধীনতার অধিকার (১৯ -২২ নং ধারা)

  ➣ভারতীয় সংবিধানের ১৯ (১) নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের সাতটি (বর্তমানে ৬টি) মৌলিক স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে, এগুলি হল ......
✮ বাক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা 
শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা
সংঘ ও সমিতি গঠনের, সংঘ ও সমিতি গঠনের স্বাধীনতা
ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার স্বাধীনতা
ভারতের যে কোনও অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাস করার স্বাধীনতা
যে কোনও পেশা বা বৃত্তি অবলম্বন বা ব্যাবসা - বানিজ্য করার স্বাধীনতা
সম্পত্তি লাভের স্বাধীনতা (বর্তমানে মৌলিক স্বাধীনতা নয় )
সম্পত্তির স্বাধীনতা, মৌলিক স্বাধীনতার তালিকা থেকে বহির্ভূত হওয়ার পর এখন মোট ছ 'টি মৌলিক স্বাধীনতা আছে । (১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংবিধান সংশোধনীর পর থেকে।

শোষণের বিরুধে অধিকার (২৩ ও ২৪ নং ধারা)

  ➣ বিনা পারিশ্রমিকে কাউকে শ্রমদানে বাধ্য করা, শিশু ও মহিলাদের পাচার বা এই জাতীয় মানবসম্পদ কেনাবেচার পদ্ধতি, কারখান, খনি কিংবা অন্য কোনও বিপজ্জনক কাজে ১৪ বছরের কমবয়সী শিশুশ্রমিক নিয়োগ - এই জাতীয় বিভিন্ন ধরনের শোষণ থেকে মুক্ত জীবন জাপনের অধিকার মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতীয় সংবিধান। 

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার [২৫-২৮ নং ধারা]

  ➣ ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিক সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে, নিজের ইচ্ছামতো ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচার করতে পারে। রাষ্ট্র হিসাবে ভারত কোনও ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতাও করবে না, আবার কোনও ধর্মের বিরুদ্ধাচরণও করবে না। ভারতের কোনও জাতীয় ধর্ম থাকবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কোনও কর আরোপ করা যাবে না। রাষ্ট্রপরিচালিত ও রাষ্ট্রের অনুদানলব্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা যাবে না।

সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার [২৯ ও ৩০ নং ধারা ]

  ➣ যারা সংখ্যালঘু , তারা জাতে নিজেদের ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হয়েছে এই বিশেষ মৌলিক অধিকার - শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার। সংখ্যালঘুরা জাতে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারেন, তাই তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার বিশেষ কিছু সুযোগ প্রদান করেছে ভারতীয় সংবিধান। এই সাংবিধানিক সুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারেন এবং নিজেদের ভাষা ও লিপিকে সেখানে নিজেদের বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে রূপে ব্যাবহার করতে পারেন।
একই সাথে এইসমস্ত সংখ্যালঘু নাগরিকদের " সংখ্যালঘু - পরিচিতি '' যাতে তাদের কোনও প্রশাসনিক বঞ্চনার সম্মুখীন না করে । সেই উদ্দেশ্যেও বিশেষ সতর্কতা গ্রহন করা হয়েছে সংবিধান রচনার সময়। রাষ্ট্রপরিচালিত বা রাষ্ট্রের আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম, জাতি অথবা ভাষার ভিত্তিতে কোনও ছাত্র - ছাত্রীর প্রবেশপথ রুদ্ধ করা যাবে না।

শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার [৩২ - ৩৫ নং ধারা]

  ➣এই মৌলিক অধিকারটিকে ডক্টর বি আর আম্বেদকার, '' ভারতীয় সংবিধানের প্রান ও আত্মা , '' রূপে বর্ণনা করেছিলেন। যদি কখনও কোনও নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হয় বা খর্ব করার প্রয়াস গৃহীত হয়, তাহলে তিনি তার এই '' শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার'' প্রয়োগ করে সরাসরি হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। বিষয়টি শোনার পর যদি মহামান্য আদালত মনে করে, উক্ত ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকদের প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, তাহলে অবিলম্বে রিট ইস্যু করার মাধ্যমে আবেদনকারীর প্রতি ন্যয়বিচার করবে।
যদি কোনও নাগরিক বা সংগঠন দেখে কোনও ক্ষেত্রে একক বা একাধিক ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে তাহলে তারা '' জনস্বার্থ মামলা '' দায়ের করার মাধ্যমে সরাসরি সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচারের আবেদন জানাতে পারে।

➣ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষার দায়িত্ব ন্যাস্ত হয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার অর্থাৎ সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্ট এর উপর। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, মৌলিক অধিকার খর্ব হলে, যে কোনও ভারতীয় নাগরিক সরাসরি সুপ্রিমকোর্ট (৩২ নং ধারা ) বা হাইকোর্ট (২২৬ নং ধারা) এর দ্বারস্থ হতে পারে। মৌলিক অধিকার খর্বের ঘটনা ঘটলে হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্ট  ✮ বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, ✮ পরমাদেশ, ✮ প্রতিষেধ, ✮ অধিকার পৃচ্ছা, ✮ উৎপ্রেষণ  এই পাঁচ ধরনের রিট বা লেখ জারি করতে পারে। 

  ➣ উপরের উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম । আপনাদের পোস্টটি কেমন লাগলো অবশ্যই মতামত জানাবেন। এই রকম সুন্দর সুন্দর পোস্ট সবার আগে পেতে সবার উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম চ্যানেলের লিঙ্কে ক্লিক করে জয়েন হয়ে যান। ধন্যবাদ 


No comments:

Post a Comment