৩৫৬ ও ৩৫৫ নং ধারা কী ? || কোন ক্ষেত্রে জারি করা হয় || কত দিন লাগু থাকে
নমস্কার বন্ধুরা,
আজকে তোমাদের ভারতের সংবিধানের যে টপিকটি সম্পর্কে আলোচনা করবো,সেই টপিকটি তোমরা এর আগে না বিস্তারিত ভাবে পড়েছো বা না বিস্তারিত ভাবে জেনেছো। আমরা আজকে তোমাদের সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে শেয়ার করছি ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ ও ৩৫৫ অনুচ্ছেদ দুটির সঙ্গে। তোমরা হয়তো এর আগে কোন খবরের কাগজে অথবা টিভিতে এই দুটি অনুচ্ছেদ দু'টির নাম শুনেছ কিন্তু আজকে আমরা এই দুটি অনুচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
তোমরা হয়তো ভাবচ্ছো আমরা কেন এই দুটি অনুচ্চদের একসঙ্গে আলোচনা করছি আলাদা আলাদা আলোচনা কেন করছিনা, কারনা ৩৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদটির সঙ্গে ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদটির মধ্যে অনেকটাই মিল আছে। তাই তোমরা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি নীচে দেওয়া অনুচ্ছেদ দুটির সম্পর্কে মনোযোগ সহকারে পড়ে নাও।
অনুচ্ছেদ ৩৫৬
ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের সরকার সাংবিধানিক শর্ত অনুসারে রাজ্য শাসনে অসমর্থ হলে কেন্দ্রীয় সরকার সেই রাজ্যের সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিজের হাতে তুলে নিতে পারে। এরপর প্রশাসনিক শাসনভার অর্পিত হয় কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োজিত রাজ্যপালের মাধ্যমে।
সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও রাজ্যে জারি করা হতে পারে এই ৩৫৬ অনুচ্ছেদ বা রাষ্ট্রপতি শাসন।সাংবিধানিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে ৩৫৬ জারির সুপারিশ করেন রাজ্যপাল তবে অনুচ্ছেদে এটাও বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি যদি রাজ্যের গভর্নর বা অন্যান্য উত্সের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অসন্তুষ্ট হন যে, সংবিধান অনুসারে রাজ্য পরিচালনা করা হচ্ছে না,তবে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন সেই রাজ্যে। এই ঘোষণা রাজ্যপালের রিপোর্টে বা তা ছাড়াই করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে গেলে, রাজ্য বিধানসভার আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদে স্থানান্তরিত হয়। রাষ্ট্রপতি একজন গভর্নর বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে রাজ্যের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন। গভর্নর বা প্রশাসকের ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করার এবং সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার।
তবে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি কোনো সীমাহীন ক্ষমতা নয়। রাষ্ট্রপতির শাসন ব্যবস্থার উপর সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির শাসন জারিকে বেআইনি বলে প্রমান করতে পারে তাহলে তখন তাকে স্বেচ্ছাচারী বা অসাধু বলে ঘোষণা করা হবে।
৩৫৬ নং ধারা কতদিন জারি করা যায় ?
এরূপ ঘোষণাকে পার্লামেন্টের নিকট ২ মাসের মধ্যে উপস্থাপিত করতে হয়, অনুমোদিত হলে এই জরুরি অবস্থা প্রথমে ৬ মাস এবং পার্লামেন্টে পুনরায় অনুমোদন করলে আরও ৬ মাস অর্থাৎ সর্বাধিক ১ বছর বলবৎ থাকবে। তবে কোনো রাজ্য নির্বাচনের অনুকুল অবস্থা না থাকলে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করা যায়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১২০ বার এরূপ রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষিত হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৩৫৫
অনুচ্ছেদ ৩৫৬ যেখানে রাজ্যের ক্ষমতার উপর কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয়, অনুচ্ছেদ ৩৫৫ সেখানে বাইরের আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে রক্ষা এবং রাজ্যের শাসনব্যবস্থা বজায় রাখার বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্যকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
এর বিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাহ্যিক আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রতিটি রাজ্যকে রক্ষা করা এবং প্রতিটি রাজ্য যাতে সংবিধান মেনে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করা কেন্দ্রের কর্তব্য। রাজ্য সরকার যদি অনুরোধ করে কিংবা রাজ্যের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্র যদি প্রয়োজনীয় বলে মনে করে, তাহলে এই বিধানের আওতায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে কেন্দ্র।
৩৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজ্য মন্ত্রিসভা সংবিধানসম্মত ভাবে সরকার না চালালে সেই মন্ত্রিসভাকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যেতে পারে৷ সেখানে ৩৫৫ অনুচ্ছেদ বলছে, বাইরের আক্রমণ বা অভ্যন্ত্ররীণ গোলোযোগ থেকে রাজ্য সরকারগুলিকে রক্ষা করতে কেন্দ্র বাধ্য এবং সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য চালাতে রাজ্য সরকারের যা যা সাহায্য প্রয়োজন, তা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বাদ্ধ ৷
আরও পড়ুন - ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
No comments:
Post a Comment