পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য - নাম | ছবি | সংক্ষিপ্ত তথ্য
পৃথিবী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবসৃষ্ট বিস্ময়কর স্থাপনায় ভরপুর। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা তাদের অভিনব নির্মাণশৈলী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের জন্য সারা বিশ্বের মানুষের বিস্ময় ও শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই অসাধারণ ও অনন্য স্থাপনাগুলিকেই বলা হয় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নতুন সপ্তাশ্চর্যগুলো মানব মেধা, শ্রম ও শিল্পকলার এক অনবদ্য উদাহরণ। এগুলি শুধুমাত্র পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র নয়, বরং সংশ্লিষ্ট দেশের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক হিসেবেও পরিচিত। সাধারণ জ্ঞান, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই পোস্টে আমরা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, তাদের অবস্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করব।
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য সমূহ
০১. চীনের মহাপ্রাচীর – (চীন) :
চীনে অবস্থিত এই মহাপ্রাচীরটি হল পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাচীর। চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য এই প্রাচীরটি নির্মিত হয়। কিন শি হুয়াং এর সময়ে এটির নির্মাণপর্ব সমাপ্ত হয় (২২০-২০৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ), এটির দৈর্ঘ্য হল ২১,১৯৬ কিলোমিটার।
![]() |
| চীনের মহাপ্রাচীর – (চীন) |
এই আশ্চর্য পেত্রা জর্ডানের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর ওয়াদি মুসার ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ৪০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত এটি ছিল নাবাতীয় রাজ্যের রাজধানী। একসময় এই পেত্রা নগরী মূলত একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত দুর্গ ছিল। এটি বিখ্যাত এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো পেত্রাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষনা করে।
![]() |
| পেত্রা – (জর্ডন) |
০৩. দ্য রোমান কলোসিয়াম – (ইতালি) :
ইতালির রোম শহরে অবস্থিত একটি বৃহৎ ছাদবিহীন মঞ্চ। এটি সাধারনত বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং কোনো প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। ৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দে কোন এক মাসে কোনো এক সময় এটি নির্মানের কাজ শুরু হয়েছিল। ৮০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট তিতুসের রাজত্ব কালে এর কাজ সম্পন্ন হয়। কলোসিয়ামের উচ্চতা ৪৮ মিটার, দৈর্ঘ্য ১৮৮ মিটার এবং চওড়া ১৫৬ মিটার।
![]() |
| দ্য রোমান কলোসিয়াম – (ইতালি) |
০৪. চিচেন ইৎজা – (মেক্সিকো) :
চিচেন ইৎজা মেক্সিকোর উত্তরে ইউকাটান উপদ্বীপে অবস্থিত মায়া সভ্যতার একটি বড় শহর। এই শহরটির আয়তন ছিল ১০০ বর্গ কিলোমিটার। অনুমান করা হয় প্রায় ১৪০০ বছর আগে ৬০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। এই চিচেন ইৎজার কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল একটি পিরামিড। এটা প্রি-কলাম্বিয়ান যুগের একটি কেন্দ্রবিন্দু। এই পিরামিড টি মূলত সূর্য দেবতার মন্দির হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মন্দিরটি চিচেন ইৎজার প্রতীক।
![]() |
| চিচেন ইৎজা – (মেক্সিকো) |
০৫. মাচু পিচু – (পেরু) :
মাচুপিচু পেরুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। এটি কোস্কো থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত হয়, কিন্তু এর এক শ বছর পর ইনকা সভ্যতা যখন স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। কয়েক শ বছর অজ্ঞাত থাকার পর ১৯১১ সালে Hiram Bingham নামে এক মার্কিন ঐতিহাসিক এটিকে আবার সমগ্র বিশ্বের নজরে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণী দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এটিকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
![]() |
| মাচু পিচু – (পেরু) |
০৬. তাজমহল – (ভারত) :
ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
![]() |
| তাজমহল – (ভারত) |
এটি ব্রাজিলের দক্ষিণপূর্ব শহর রিও ডি জেনেরিও -তে যিশুর একটি বিশাল মূর্তি। পাহাড়ের চূড়ায় যিশু দুহাত প্রসারিত করে আছেন। যেই পাহাড়টিতে মূর্তিটি রয়েছে সেটির উচ্চতা প্রায় ৭১৩ মিটার বা ২৩৪০ ফুট। ১৯২১ সালে এই মূর্তিটি তৈরীর কাজ শুরু করা হয় এবং ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এই মূর্তিটির প্রধান নির্মাতা ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কি। সম্পূর্ণ গ্রানাইট দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল এই মূর্তিটি। মূর্তিটির উচ্চতা ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট। এবং এক একটি হাতের দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট।
![]() |
| ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি – (ব্রাজিল) |
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য কাকে বলে?
উত্তর: আধুনিক যুগে নির্বাচিত বিশ্বের সাতটি বিস্ময়কর স্থাপত্যকে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য বলা হয়।
প্রশ্নঃ নতুন সপ্তম আশ্চর্য কবে ঘোষণা করা হয়?
উত্তর: ৭ জুলাই ২০০৭ সালে।
প্রশ্নঃ পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচন করে কোন সংস্থা?
উত্তর: New7Wonders Foundation
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মোট সংখ্যা কত?
উত্তর: ৭টি।
প্রশ্নঃ ভারতের কোন স্থাপনাটি সপ্তম আশ্চর্যের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: তাজমহল।
প্রশ্নঃ তাজমহল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: আগ্রা, উত্তরপ্রদেশ, ভারত।
প্রশ্নঃ তাজমহল কে নির্মাণ করেন?
উত্তর: সম্রাট শাহজাহান।
প্রশ্নঃ তাজমহল কোন স্মৃতিসৌধ হিসেবে নির্মিত?
উত্তর: মমতাজ মহলের স্মৃতিতে।
প্রশ্নঃ চীনের সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: গ্রেট ওয়াল অব চায়না (চীনের মহাপ্রাচীর)।
প্রশ্নঃ গ্রেট ওয়াল অব চায়না কেন নির্মিত হয়েছিল?
উত্তর: বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
প্রশ্নঃ ব্রাজিলের সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার
প্রশ্নঃ ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: রিও ডি জেনেইরো, ব্রাজিল
প্রশ্নঃ পেরুর সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: মাচু পিচু
প্রশ্নঃ মাচু পিচু কোন সভ্যতার নিদর্শন?
উত্তর: ইনকা সভ্যতা
প্রশ্নঃ মেক্সিকোর সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: চিচেন ইৎজা
প্রশ্নঃ চিচেন ইৎজা কোন সভ্যতার নিদর্শন?
উত্তর: মায়া সভ্যতা
প্রশ্নঃ জর্ডানের সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: পেট্রা
প্রশ্নঃ পেট্রা কোন পাথরে খোদাই করা শহর?
উত্তর: লাল বেলেপাথর
প্রশ্নঃ ইতালির সপ্তম আশ্চর্য কোনটি?
উত্তর: কলোসিয়াম
প্রশ্নঃ কলোসিয়াম কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: রোম, ইতালি
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য তালিকায় মোট কতটি দেশ অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: ৭টি দেশ
প্রশ্নঃ সপ্তম আশ্চর্য নির্বাচন হয় কীভাবে?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী অনলাইন ভোটের মাধ্যমে
প্রশ্নঃ প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে বর্তমানে কোনটি টিকে আছে?
উত্তর: গিজার পিরামিড
প্রশ্নঃ গিজার পিরামিড কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মিশরে
প্রশ্নঃ গিজার পিরামিড কোন যুগের আশ্চর্য?
উত্তর: প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্য
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য PDF টি সংগ্রহ করতে নীচের Download Now-লেখায় ক্লিক করুন
File Details ::
File Name: পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য
File Format: PDF
No. of Pages: 03
File Size: 256 KB








No comments:
Post a Comment