Breaking




Friday 15 July 2022

নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও

 নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও 

নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও
নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও 
একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থী.. ..
আমরা আজ তোমাদের নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয়-এই প্রশ্নের উত্তরটি খুব সুন্দর ভাবে এবং সহজ ভাবে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। তোমরা যারা উক্ত শ্রেণিতে পড়ছো এবং এই প্রশ্নের উত্তরটি প্রয়োজন তোমরা অবশ্যই প্রশ্নটি মুখস্থ করে রাখতে পারো।

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।

উত্তর ঃ
ভূমিকা ঃ আনুমানিক খ্রীঃ পূর্ব দশ হাজার অব্দ নাগাদ মানুষ মধ্যপ্রস্তর যুগ অতিক্রম করে নতুন এক যুগে পদার্পণ করে। এই যুগে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিত্তিতে ঐতিহাসিকগণ এই পর্বের মানবসভ্যতাকে বন্য প্রস্তর যুগ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নব্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বর্তমান পাকিস্তানের মেহেরগড়ে, ইরাকের জারশে ও হরিণীর অন্যান্য স্থানে। 

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার -

❐ হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি ঃ এ যুগের হাতিয়ার গুলিতে ধারাবাহিক বিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতিগুলি এ সময় যথেষ্ট তিঘ্ন, মসৃণ ও উন্নত হয়ে ওঠে। এ যুগে মানুষ নানা ধরনের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত। যেমন - কাস্তে, নিড়ানি, হামালদিস্তি, জাঁতা, হাতুড়ি, বাটালি, নেহাই, তিরধনুক প্রভৃতি।

❐ জীবিকা ঃ এই যুগে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশুপালন, মৎস শিকার ও কৃষিকাজ। এ যুগে মানুষও খাদ্য ও কৃষির প্রয়োজনে পশুপালন করত, এই পশুর তালিকায় ছিল, গরু, মোষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। কৃষির সরঞ্জামগুলি দেখে মনে হয় যে, সে যুগে মানুষ কৃষিকাজে অভ্যস্থ ছিল। তারা গম, যব, বার্লি, খেজুর, কার্পাস ইত্যাদি চাষ করত। মেহেরগড়ে এটি বিশালাকার মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে, পণ্ডিতরা মনে করেন এতে শস্য মজুত করে রাখা হত।

❐ সামাজিক জীবন ঃ এ যুগে মানুষ প্রথম যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করে দলবদ্ধ ভাবে এক জায়গায় বসবাস করে, ক্রমে তারা নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে তোলে। পুরুষেরা ঘরের বাইরে শ্রমমূলক কাজ করত এবং নারীরা গৃহস্থলির কাজ করত। মেহেরগড় সভ্যতার মৃত ব্যাক্তিকে সমাধি দিয়ে সৎকার করত, সমাধি গুলিতে অলংকার, জলশদ্ধিমান শদ্ধি প্রভৃতি দেখে মনে হত তারা পরলোকে বিশ্বাসী ছিল। তারা অলংকার হিসাবে ছুরির শালা, হাতের আংটি, সিন্ধুকের কৌটো ইত্যাদি ব্যাবহার করত।

❐ বিভিন্ন শিল্প ঃ সম্ভবত খ্রীঃ পূর্ব ৫০০০ অব্দ থেকে ৪০০০ খ্রীঃ পূর্ব অব্দের মধ্যে তারা পোড়ামাটির মৃৎপাত্রের ব্যাবহার শেখে। এই সময় মৃৎশিল্পীরা ঘুরন্ত চক্রের ব্যাবহার শেখে মৃৎপাত্র, তামার পুঁথি ও আংটি এবং ১৪টি তামা গলানোর মূর্তি দেখে মনে হয় তারা দ্বিতীয় স্তরে তাম্র ব্রঞ্জ যুগে পা রেখেছিল। পশমের কাপড়ের নিদর্শন দেখে পণ্ডিতগণ স্বীকার করেছেন, যে এই সভ্যতায় দ্বিতীয় স্তরেই বিশ্বে প্রথম কার্পাস বস্ত্রের প্রচলন ঘটে।

❐ নগর কেন্দ্রিকতা ঃ মেহেরগড়ের মানুষ কর্তৃক নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে তোলার পরিচয় পাওয়া যায়, এ যুগের প্রথম দিকে মানুষ রোদে পোড়া কাঁচামাটির ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি করত, বাড়িগুলি চার বা বেশি কামরায় বিভক্ত ছিল। ঘরগুলি গরম রাখার জন্য ঘোরে আগুন জ্বালানোর ব্যাবস্থা ছিল, ব্রতিন্দ্রনাথ মুখার্জি, ডঃ রনবীর চক্রবর্তী প্রমুখ ঐতিহাসিকবিদ গণ এই সভ্যতাকে একটি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার পক্ষে রায় দিয়েছেন।

❐ উপসংহার ঃ নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষের এই উন্নত জীবনযাত্রা লক্ষ্য করে ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড এই যুগকে, "নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব"-বলে অভিহিত করেছেন, আবার ঐতিহাসিক ডঃ রনবীর চক্রবর্তী বলেছেন, "মেহেরগড় সভ্যতার হাট ধরে ভারতে প্রথম নরাশ্রয়ী অর্থনীতির পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যায়।"
----- ধন্যবাদ -----

No comments:

Post a Comment