ম্যানর প্রথা বা ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
![]() |
ম্যানর প্রথা বা ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য |
ডিয়ার ছাত্রছাত্রী..
আমরা আজকে একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের ৫ম অধ্যায়ের ম্যানর প্রথা বা ম্যানর ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করবো। তাই যাদের এই প্রশ্নটি প্রয়োজন আছে অবশ্যই প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে রাখো।
❀ ম্যানর ব্যবস্থা কাকে বলে ?
উত্তর ঃ মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোয় ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করত। এই রকম এক বা একাধিক গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠত "ম্যানর"।গ্রামে সামন্তপ্রভুর অধীনস্থ জমি চাষ করার জন্য ইউরোপে যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে ম্যানর ব্যবস্থা বলা হয়। ফ্রান্সের ম্যানর ব্যবস্থা "সেইন্যারি" নামে পরিচিত ছিল।
❀ ম্যানর প্রথা বা ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
মধ্যযুগে ইউরোপে গড়ে ওঠা ম্যানর ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ -
❒ ম্যানর হাউস ঃ প্রতিটি ম্যানর অঞ্চলে ম্যানর প্রভুর খামার বাড়ি অর্থাৎ ম্যানর হাউস থাকত। এটি ছিল সামন্ত প্রভুদের স্থানীয় প্রশাষনিক কেন্দ্র, ম্যানর হাউসে খাওয়ার হলঘর, শোবার ঘর, উপাসনা কক্ষ, ঘোড়ার স্থাবল প্রভৃতি থাকত।
❒ অর্থনৈতিক দিক ঃ ম্যানরে সামন্ত প্রভুর অধীনে কৃষক ও ভুমিদাসরা উৎপাদন কাজে অংশ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিকে সচল রাখত। তবে এখানকার অর্থনৈতি ছিল একেবারেই অঞ্চল ভিত্তিক।
❒ জমির চরিত্র ঃ প্রতিটি ম্যানরের যে বিপুল পরিমাণ জমি ছিল তার মধ্যে ছিল চাষের জমি, পশুচারণ ভুমি, জলাভূমি, পতিত জমি, জঙ্গল, কৃষকের গৃহ, গির্জা ও শ্রমিক কারিগরদের বাসগৃহ প্রভৃতি, এখানে মূলত দু'প্রকার জমি ছিল- ১. ডিমিন বা প্রভুর খাসজমি ২. কৃষকদের বসতী, আবাদি ও পশুচারণ জমি।
❒ জমির বণ্টন ঃ আবাদি জমির কিছু অংশ সামন্তপ্রভু নিজের দখলে রেখে বাকি জমি কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। সামন্তপ্রভু তার নিজের দখলে রাখা জমিতে স্বাধীন কৃষক, আধা স্বাধীন কৃষক বা ভিলেইন এবং ভুমিদাস বা সার্ফদের বেগার শ্রমের দ্বারা উৎপাদন কাজ চালাতেন। অবশিষ্ট জমি ম্যনরে বসবাসকারী অন্তত কারো থেকে ৬০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে বন্টিত হত। প্রভুকে বার্ষিক বিভিন্ন ধরনের কর ও বেগার শ্রম দিয়ে তারা এই জমি ভোগ করতে পারত।
❒ উৎপাদন ব্যবস্থা :: ম্যানরের জমিতে প্রথম দিকে বছরে দুটি এবং পরে তিনটি ফসল চাষ হত। উৎপাদন হত মূলত গ্রামের প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করেই।
❒ রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ ঃ ম্যানর গুলি ছিল রাষ্ট্রের একটি ক্ষুদ্র সংস্করন। এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ম্যানর হাউস-এ প্রভু বসবাস করতেন। এখান থেকে প্রভু ম্যানরে বসবাসকারী তারা অধীনস্থ প্রজাদের ওপর শাষন ও নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতেন। ম্যানর অঞ্চলে প্রভুর ক্ষমতাই ছিল চূড়ান্ত।
❒ স্বয়ংসম্পূর্ণতা ঃ প্রতিটি ম্যানর ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন ম্যানরে বাসকরত, তেমনি নিত্যপ্রয়জনীয় সামগ্রীও ম্যানরেও পাওয়া যেত। ম্যানরের প্রয়োজন মতোই এখানকার যাবতীয় উৎপাদন কাজ চলত।
❒ উপসংহার ঃঃ মধ্যযুগের ইউরোপের প্রচলিত সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশেষ ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল। এই কাঠামোর প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ভূস্বামীর খামার বাড়ি, দুর্গ এবং গির্জা। সামন্তপ্রভুরা শিকার, যুদ্ধ ও অন্যান্য আনন্দ কর দিন যাপন করত। আর সমগ্রদেশের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উৎপাদন সম্পন্ন করত ম্যানরের কৃষকরা।
----- ধন্যবাদ -----
No comments:
Post a Comment