একনজরে অণুজীব
আমাদের পরিবেশে অনেক সজিব উপাদান আছে , যাদেরকে আমরা বায়ু , জল , মাটি অথবা অন্য নানা জায়গায় এদের দেখা যায় । কিন্তু আমরা কি জানি আমাদের চারিপাশে এরা ছাড়াও আরও নানা ধরনের জীব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । এদের খালি চোখে দেখা যায় না , যাদের কে আমার অণুজীব বলবো, আমরা এই অদৃশ্য অণুজীবদের সম্পর্কে জানবো ।
সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে , জেনে নেওয়া যাক অণুজীব দের সম্পর্কে । আমরা আজকে অণুজীব দের সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে জানবো।
☞ অণুজীবের সংজ্ঞা ঃ
অণুজীব হলো সেই সকল ক্ষুদ্র এককোষী জীব যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। এরা আদিকেন্দ্রিক ও সুকেন্দ্রিক উভয় প্রকার হতে পারে। সকল প্রকার ব্যাক্টেরিয়া, আরকিয়া, প্রোটোজোয়া, এককোষী শৈবাল এবং ছত্রাক অণুজীবের অন্তর্গত।
☞ কোথায় কোথায় অণুজীব দেখা যায় ঃ
(১) তোমার কাছাকাছি কোনো আবদ্ধ জলাশয় বা পুকুর থেকে কিছুটা জল সংগ্রহ করো , এবং সেই জলটিকে একটা কাপড়ে ছেঁকে জলটাকে রেখে দাও ।
(২) একটা গাছের পাতা সংগ্রহ করো , তারপর ওই পাতার উপরের তলটা জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ওই ধোওয়া জলটি সংগ্রহ করে রাখো ।
(৩) তোমার নোংরা হাতটি জলে ধোও এবং ওই ধোওয়া জলটি একটি পাত্রে সংগ্রহ করে রাখো ।
(৪) দু-ফোঁটা দই নিয়ে তাতে একটু জল মিশিয়ে রাখো ।
■ উপরের যে জল গুলি সংগ্রহ করতে বলা হল সেই সমস্ত জল গুলি তোমরা দেখবে প্রায় স্বচ্ছ । কিন্তু তোমরা যদি ওই জল গুলির এক-দু ফোঁটা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নীচে দেখলে দেখবে কত ছোটো ছোটো জীব তাতে ভেসে আছে বা ছোটাছুটি করছে , ওই গুলিকে আমরা অণুজীব বলবো ।
☞ অণুজীবের বৈশিষ্ট্য ঃ
(১) অধিকাংশ অণুজীবদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় আবার ইস্ট কিংবা টিটেনাস রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবরা কম অক্সিজেন ঘনত্বের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে ।
(২) এদের বেঁচে থাকার জন্য ভিজে জায়গা খুবি গুরুত্বপূর্ণ ।
(৩) অন্ধকার জায়গায় এরা তাড়াতাড়ি বাড়ে । সরাসরি সূর্যের আলর সংস্পর্শে এলে অনেক অনেক অণুজীব মারাও যায় ।
(৪) এদের কেউ কেউ পচা বস্তু থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে । আবার অনেক অনেক অণুজীব অন্য কোনো জীবদেহে বাসা বাঁধে ও ওই জীবদেহের নানা অঙ্গ বা কলাকোশ থেকে বেঁচে থাকার খাদ্য সংগ্রহ করে । আবার কোনো কোনো অণুজীব নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে ।
(৫) অন্য কোনো জীবদেহে বাসা বাঁধে খাদ্য সংগ্রহ করে এমন ধরনের অণুজীব হল ভাইরাস , কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া (মোনেরা) , ছত্রাক (ফাংগি) ও কোনো কোনো আদ্যপ্রানী (প্রোটিস্টা) । সব ছত্রাক কিন্তু অণুজীব নয় ।
(৫) শৈবাল ও কয়েক ধরনের অণুজীব নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে । প্ল্যান্টি রাজ্যের অন্তর্গত শৈবালরা অণুজীব নয় ।
☞ অণুজীবের শ্রেণিবিভাগ ঃ
অণুজীবকে সাধারণত ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । সেই গুলি হল নিম্নরূপ - (১) ব্যাকটেরিয়া (মোনেরা) (২) ছত্রাক (ফাংগি) (৩) আদ্যপ্রানী (প্রোটিস্টা) (৪) শৈবাল (প্রোটিস্টা) ।
(১) ব্যাকটেরিয়া ঃ
◉ জীবদের মধ্যে আকারে সবথেকে ছোটো ও কোশীয় গঠনের দিক থেকে সরলতম ।
◉ এরা নানা আকারের হয় - কমা , রড , প্যাঁচানো স্ক্রু গোলাকার ।
◉ কোষপ্রাচীর থাকলেও এরা উদ্ভিদ কশের মতো নয় ।
◉ একক পর্দা দিয়ে ঘেরা কোনো অঙ্গানু থাকেনা । তবে পদার্থবিহীন অঙ্গানু রাইবোজোম থাকে ।
◉ প্রকৃত নিউক্লিয়াস থাকে না , পরিবর্তে প্যাঁচানো DNA থাকে ।
(২) ছত্রাক ঃ
◉ এদের কোষপ্রাচীর কাইটিন দ্বারা গঠিত ।
◉ এরা জলে , স্থলে , আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে থাকতে পারে ।
◉ এদের দেহ এককোশী গোলাকার (ইস্ট) বা সরু সুতোর মতো অংশ দিয়ে তৈরি । এই সুতোর মতো অংশের নাম হলো হাইফি । হাইফি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শাখাপ্রশাখায় ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে জোট পাকিয়ে মাইসেলিয়াম নামক একধরনের গঠন তৈরি করে ।
◉ এদের কোশে কোষপ্রাচীর , নিউক্লিয়াস , নানা অঙ্গানু থাকলেও ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না । তাই এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না ।
(৩) আদ্যপ্রানী ঃ
◉ এদের দেহে একটিমাত্র কোশ নিয়ে গঠিত । কোশে এক বা একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে ।
◉ এরা নানা আকারের হয় - গোলাকার , ডিম্বাকার , লম্বা বা থালার মতো ।
◉ এরা স্বাধীনভাবে একা থাকে । আবার অনেকে মিলে একসঙ্গে থাকে । আবার কেউ কেউ পোষক কোশের মধ্যে থেকে নানা রোগ সৃষ্টি করে ।
◉ এরা নানাভাবে চলাচল করে । কারো দেহ ক্ষণপদ , আবার কারোর দেহে চাবুকের মতো ফ্ল্যাজেলা বা চুলের মতো সিলিয়া থাকে ।
(৪) শৈবাল ঃ
◉ এদের দেহ এককোষী । অনেকসময় একাধিক কোশ পরস্পর যুক্ত হয়ে বলের মতো গঠন তৈরি করে।
◉ এদের কোশে কোষপ্রাচীর , নিউক্লিয়াস , নানা অঙ্গানু থাকে । নানা আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে ।
◉ এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আলোর প্রয়োজন হয় ।
◉ এরা সাধারানত জলে থাকে ।
☞ ছত্রাক , আদ্যপ্রানী , ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস ঘটিত রোগ ☜
◉ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ ঃ- যক্ষ্মা , কলেরা , ডায়ারিয়া , টাইফয়েড , টিটেনাস , ডিপথেরিয়া , নিউমোনিয়া ইত্যাদি।
◉ ভাইরাস ঘটিত রোগ ঃ- পক্স , মাম্পস , মিসলস (হাম) , পোলিও , জলাতঙ্ক , হেপাটাইটিস , ডেঙ্গুজ্বর , AIDS ইত্যাদি।
◉ আদ্যপ্রানী ঘটিত রোগ ঃ- ম্যালেরিয়া , কালাজ্বর , অ্যামিবিয়াসিস ইত্যাদি।
◉ ছত্রাক ঘটিত রোগ ঃ- দাদ , হাজা , ছুলি , অ্যালার্জি , নাক , মুখ , কান , গলার রোগ ইত্যাদি।
আজকে আমরা শিখলাম এবং জানলাম অণুজীব সম্পর্কে । তোমাদের পোস্টটি কেমন লাগলো তোমাদের মতামত অবশ্যই জানাবে । এই রকম গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলি সবার আগে পেতে সাইটের উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম ও Whatsapp লিঙ্কে ক্লিক করে জয়েন হয়ে যাও । ধন্যবাদ , তোমার দিনটি শুভ হক ।
No comments:
Post a Comment