Breaking




Monday, 30 August 2021

কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ । A few endangered wildlife and their conservation.

 কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ 

কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ
কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ 
বন্ধুগন,
আজকে আমরা আলোচনা করবো কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ সম্পর্কে । আমারা এই বিষয়টি অনেকেই লক্ষ করেছি যে , আমরা ছোটবেলা থেকে যে সমস্থ প্রাণী দেখেছি । তার অনেক প্রাণীই এখন আর প্রায় দেখা যায়না । কারন অনেক পরিবেশ গত কারনে তারা নিজেদেরকে অভিযোজন করতে না পেরে মারা যায় । তাই আমরা আজকে সেই সমস্থ কিছু প্রাণীর সম্পর্কে জানবো , যারা হাড়িয়ে গেছে বা হাড়াতে বসেছে ।
          সুতরাং আর বেশি সময় নষ্ট না করে জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ সম্পর্কে ।
 বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ 
 IUCN ( International Union for Conservation of Nature) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা , যারা প্রকৃতিতে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবদের বিলুপ্ত হয়ে যাবার সম্ভবনা খতিয়ে দেখেন এবং তাদের সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ সহায়তা করেন । IUCN -এর বিচারে যেসব প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যাবার সম্ভবনা প্রবল এমন কয়েকটি পরিচিত প্রানীর কথা নীম্নে আলোচনা করা হল --

শকুন 
 
 শকুনের পরিচিতি - শকুনের বেশ বড়োসরো চেহারা , তবে মটেও সুন্দর নয় । কালচে-খয়েরি শরীরের রং , রোগা , লম্বা , পালকহীন বাঁকা গলা । ওই লম্বা গলা পশুর মৃতদেহের মধ্যে ধুকিয়ে দেয় খাবার সংগ্রহের জন্য বিশাল সুবিধের । বিশ্রামের সময় তাদের পিছিনদিকের সাদা অংশ দেখা যায় , আর ওড়ার সময় যখন ডানাগুলো মেলে দেয় তখন নীচের সাদা পালক দেখেই তাদের চেনা যায় ।
 শকুনের বাসা - অশ্বত্থ , বট , তাল , তেঁতুল , শিমুল , পাকুরের মতো লম্বা লম্বা গাছের ডালে ওরা বাসা বাঁধতো । কাঠকুঠো , ডালপালা জোগাড় করে ডালের খাঁজে বেশ শক্তপোক্ত ভাবে বাসা বানাতো ওরা । সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ওরা বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে । একটা পাখি একটাই ডিম পাড়ে । অনেক বড়ো বড়ো বাড়ি তৈরির প্রয়োজনে গাছগুলো কেটে ফেলার কারনে শকুনের বাসা বাঁধার জায়গা ক্রমশ হাড়িয়ে যাচ্ছে ।
সাফাইকর্মী শকুন - গ্রামের কিংবা শহরের শেষপ্রান্তে লম্বা বা ঝাঁকড়া গাছে শকুনরা থাকত । দল বেঁধে অপেক্ষায় থাকত কখন একটা মরা পশু আসবে । ভাগারে বা অন্য কোথাও মরা পশুর দেহ পেলেই ওরা ওই পশুর ওপর বসে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতো , শহরের যাবতীয় আবরজনারস্তুপ থেকে মৃত প্রানী খেয়েই ওদের জীবন চলতো । ফলে ওই সমস্থ মৃত প্রানীর দেহ পচে মহামারী সৃষ্টিকারী জীবাণুরা বিস্তারলাভ করতে পারত না ।
 শকুনের সংরক্ষণ - ২০০৬ সালের মার্চ মাসে ভারত সরকার ডাইক্লোফেনাককে নিসিদ্ধ ঘোষণা করলেন । শকুনদের সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা শুরু হলো । শকুন অনেকদিন বাঁচে , আবার এদের জীবনের বিকাশ বেশ ধীরগতিতে হয় । তাই শকুনকে আবার তার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েক দশক লেগে যাবে । 
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলা হয়েছে । তার মধ্যে হরিয়ানার পিঞোর এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে রাজভাতখাওয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য । 

মেছোবিড়াল (বাঘরোল)
 
 মেছোবিড়াল - সাইবেরিয়ার বরফ-ঠাণ্ডা এলাকা থেকে আমাজনের সূর্যের আলো না পৌঁছোনো বর্ষাবন কিংবা লাদাখের মরু এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের জলাভুমি এবং আবহাওয়ার এই চরম বিপরীত অবস্থাতেও গোটা পৃথিবী জুড়ে যে প্রানীরা টিকে আছে তারা হলো বন্যবিড়াল । বন্যবিড়াল বলতে আমরা সাধারণত বাঘ , সিংহ বা চিতাবাঘকেই বুঝি । বাঘ আমাদের জাতীয় পশু কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপশু হল বন্যবিড়াল যার নাম হল মেছোবিড়াল বা বাঘরোল ।
 মেছোবিড়ালের গঠন , আচরণ ও বাসস্থান - আকারে বেশ বড়োসড়ো হুলোবিড়ালের থেকে দ্বিগুণ বা তারও বেশি । আর একসারি ছোটো খসখসে লোম শরীরকে রক্ষা করার জন্য । গায়ের রং ধুসর বা জলপাই রঙের সঙ্গে খয়েরি মেশানো । ধুসর রং - এর সারা গায়ে কালো লম্বায় ছোপ । আর মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত ৪-৬ টি কালো ডোরা রেখা নেমে গেছে । বেঁটে মোটাসোটা লেজ বরাবর কালো দাগের পটি । সামনের পায়ের আঙুলের মাঝখানের চামড়া অনেকটা জোড়া মতন । 
খালবিল , ঝিল , বাদাবনের জলাভুমি থেকে ঝোপ-জঙ্গল-সব জায়গায়তেই এদের দেখা যায় । এর নিশাচর । সাঁতারেও খুব দক্ষ । সাধারণত মাছ শিকার করলেও কাঁকড়া , শামুক , ইঁদুর বা পাখি খেয়ে পেট ভরায় ।
 মেছোবিড়ালের সংকট ও সংরক্ষণ - যেখানে এককালে ঝোপজঙ্গল বা খড়ি , নল , হোগলায় ভরা জলাভূমি ছিল , সেখানে তৈরি হয়েছে বড়োবড়ো রাস্তা , আবাসন প্রকল্প ও শপিং মল । কোথাও তৈরি হচ্ছে কলকারখানা আর ইটভাটা । ফলে হাড়িয়ে যেতে বসেছে মেছোবিড়ালের বাসস্থান আর ক্রমশ কমছে তাদের প্রাকৃতিক খাবার । এর ফলে মেছোবিড়াল গুলো কখনো-কখনো হাঁসমুরগির লোভে মানুষের বসতি এলাকায় চলে আসতে বাধ্য হয় ফলে মানুষের হাতে মারাও পড়ে । 
এদের বাসস্থান সুরক্ষিত না হলে এবং এদের হত্যা করা সম্পূর্ণ বন্ধ না হলে , বিপন্ন এই প্রাণীটি একদিন পৃথিবী থেকে হাড়িয়ে যেতে পারে । 
 গঙ্গার শুশুক 

 গঙ্গার শুশুকের বাসস্থান , স্বভাব ও গঠন -  ভারত, বাংলাদেশ, ও নেপালে প্রাপ্ত স্বাদু জলের শুশুক বা ডলফিনের একটি প্রজাতি। সাধারণত মিষ্টি জলের এই স্তন্যপায়ী প্রানীর বাস গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী আর তাদের উপনদীতে । বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে গঙ্গা নদী শুশুকের অস্তিত্ব খুব কম হলেও মাঝে মাঝে তা দেখা যায়। ভারত সরকার গঙ্গা নদী শুশুককে জাতীয় জলচর প্রাণী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
     এদের দেহ ধূসর বাদামি বা কুচকুচে কালো রঙের হয় । দেহের মাঝখানটা মোটা , দু-প্রান্ত সরু আর সুচালো । এদের গায়ে লোম থাকে । চামড়ার নীচে সঞ্চিত পুরু চর্বির স্তর জলের নীচে এদের শরীরকে গরম রাখে । ঘাড় না থাকায় এদের মাথা আর ধড় আলাদা করা যায়না । মুখের সামনে ঠোঁটদুটো অনেকটা চঞ্চুর মতো প্রলম্বিত । এদের প্রতিটি চোয়ালে ২৭-৩২ টি ছোটো ছোটো দাঁত থাকে । এদের চোখে কোনো লেন্স থাকে না । তাই এরা কার্যত অন্ধ । যদিও এরা আলোর দিক আর তীব্রতা বুঝতে পারে।
       বর্ষায় ভরা নদীর উজান বেয়ে এরা ছোটো ছোটো উপনদীতে পৌঁছে যায় । আবার শুকনো মরশুমে নদীর স্রোতে ফিরে আসে । এরা মাংসাশী প্রানী , নদীর তলদেশে কাদামাটিতে লুকিয়ে থাকা জীবদের শিকার করে । মাছ আরও নানা ধরনের জলজ অমেরুদণ্ডী প্রানী যেমন - চিংড়ি এদের খাবার । 

 গঙ্গার শুশুকের সংকট ও সংরক্ষণ - মানুষের নানান কাজের জন্য এদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন । নদীবাঁধ আরও অন্যান্য নানা কারনে নদীর জলের গভীরতা কমে যাচ্ছে ফলে নদীর মাঝে মাঝে বালির চর জেগে উঠচ্ছে ফলে এরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারছেনা । যার কারনে এরা ছোটো ছোটো গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যাওয়ায় এদের প্রজননের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে । তাছাড়া  গঙ্গা নদীর পাড়ে নানা রাসায়নিক কারখানা , তেল পরিশোধনাগারের মতো নানা রকম কারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে পড়ে নদীর জল দূষিত হচ্ছে যার ফলে নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেই কারনে এদের খাবারের অভাবে বিপদে পরছে শুশুকেরা ।
         গঙ্গার শুশুককে জাতীয় প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । ১৯৯১ সালে বিহারের সুলতানগঙ্গ আর কাহালগাঁও -ের মাঝে গঙ্গার ৬০ কিমি অঞ্চল জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর প্রথম শুশুক স্যাংচুয়ারি , বিক্রমশীল গ্যাঙ্গেটিক ডলফিন স্যাংচুয়ারি । স্থানীয় জেলেদের মধ্যে শুশুক সংরক্ষণের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার করা হচ্ছে ।
 একশৃঙ্গ গণ্ডার 

 গণ্ডারের স্বভাব , গঠন ও বাসস্থান - একশৃঙ্গ গণ্ডার পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ীদের অন্যতম । গণ্ডারের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল । কিন্তু ঘ্রানশক্তি খুব প্রবল । এরা সাধারণত সমভূমি বা জলা জায়গার আশেপাশে লম্বা ঘাসের জঙ্গলে থেকে । গণ্ডার সাধারণত একা থাকে । এরা সাধারণত ভোরে , সন্ধ্যায় বা রাতের দিকে চরে বেড়ায় । রোদ বেশি উঠে গেলে এরা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় । 
        এরা মূলত লম্বা লম্বা ঘাস বা জলজ উদ্ভিদ , ছোটো ছোটো গাছপালা , লতাপাতা এমনকি ফলও খায়। গণ্ডারের নীচের চোয়ালের কৃন্তক দাঁতটি খুব লম্বা হয় । অনেক সময় গণ্ডারের সঙ্গে গণ্ডারের সংঘর্ষের সময় এই দাঁত গভীর ক্ষত সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে । পুরুষ ও স্ত্রী গণ্ডার দুজনেরই নাকের ওপরে চামড়ার ওপর প্রায় ৬০ সেমি লম্বা একটা শিং থাকে । 
         গণ্ডারের একটা অদ্ভুত অভ্যাস হলো একই জায়গায় মলত্যাগ করা । ফলে দিনের পর দিন এই মলের স্তুপের উচ্চতা বাড়তে থাকে । 
   গণ্ডারের সংকট ও সংরক্ষণ - একশৃঙ্গ গণ্ডার সাধারণত ৩৫-৪৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে । এদের সংখ্যা কমে যাবার প্রধান কারন হলো চোরাশিকার । গণ্ডারের শিং -এর একটা মোটা অঙ্কের দাম আছে । যার কারনে এদের কে শিকার হতে হছে । তাছাড়াও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন থাকার জায়গা না থাকায় এদের বিপন্নতার অন্যতম কারন । গণ্ডার সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ গণ্ডার শিকার নিসিদ্ধ করেছে ।
               একসময় সিন্ধু নদীর উপত্যকা থেকে মায়ানমারের উত্তর দিক পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে একশৃঙ্গ গণ্ডারের দেখা পাওয়া যেত । বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা অঞ্চলে ( মানস , কাজিরাঙ্গা , পবিতোরা প্রভৃতি ) , পশ্চিমবঙ্গের দুটি ন্যাশনাল পার্কে ( জলদাপারা , গোরুমারা ) , উত্তরপ্রদেশের দুধুয়া সংরক্ষিত অরন্য , আর নেপালের চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানেই কেবল এদের দেখা পাওয়া যায় ।

             আমরা আজকে জানলাম কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও তাদের সংরক্ষণ সম্পর্কে । তোমাদের পোস্টটি কেমন লাগলো অবশ্যই মতামত জানাবে । আর এই রকম সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি সবার আগে পেতে সাইটের উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম ও Whatsapp লিঙ্কে ক্লিক করে জয়েন হয়ে যাও । ধন্যবাদ , তোমার দিনটি শুভ হোক ।

No comments:

Post a Comment