ভারতের অঙ্গরাজ্য গঠন ও পুনর্গঠন পদ্ধতি
আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে হাজির হয়েছি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য গঠন ও পুনর্গঠন এই পোস্টটি নিয়ে। যে পোস্টটির মধ্যে কিভাবে একটি নতুন রাজ্য গঠন করা হয় এবং কোনো অঙ্গরাজ্যের পুনর্গঠন, সীমানার পরিবর্তন, নাম পরিবর্তন, একটা রাজ্য থেকে দুই না তার তার অধিক রাজ্যে বিভাজন করা যায় এই সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলি খুবই সহজ এবং সরল ভাষায় সাজিয়ে দেওয়া আছে।
অতএব তোমরা দেরি না করে ভারতীয় সংবিধানের এই গুরুত্বপূর্ণ টপিকটির সম্পর্কে জানতে অবশ্যই নীচের প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে দেখে নাও।
বিষয়বস্তু
➣সংবিধানের ২নং থেকে ৪নং ধারায় ভারতীয় অঙ্গরাজ্য গঠন ও পুনর্গঠন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আইন প্রণয়ন করে নতুন রাজ্যগঠন কিংবা পুনর্গঠন, আয়তন পরিবর্তন / সীমার পরিবর্তন / একটি রাজ্যকে দুটি বা তার অধিক রাজ্যে বিভাজন/দুটি রাজ্যের সংযুক্তিকরণ- এর ক্ষমতা সংবিধান প্রদান করেছে পার্লামেন্টের হাতে (২নং ধারা)।
কেবলমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা মতাবেক ঐ রাজ্যের মতামত ছাড়া রাজ্যের নাম, আয়তন, সীমানা পরিবর্তজনিত কোনো বিল পার্লামেন্টে পেশ করা জেত না । বর্তমানে ৩৭০ নং ধারাটি বাতিল হবার পর থেকে অন্যান্য রাজ্যের মতোই একি ভাবে রাজ্যগঠন ও অন্যান্য বিষয় গুলি পরিবর্তন করা যায়।
ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পুনর্গঠনের ইতিহাস
(১) ভারতের অঙ্গরাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালে এস কে ধরের নেতৃত্বে গঠিত হয় ধর কমিশন।
(২) ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে, ঐ একই উদ্দেশ্যে জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল এবং পট্টভি সিতারামাইয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয়, জে ভি পি কমিটি।
(৩) ১৯৫৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেগু ভাষাভাষী ভারতীয়দের জন্য একটি পৃথক রাজ্য গঠনের দাবীতে আন্দোলনরত পোট্টি শ্রীরামুল ৫৬ দিন অনশনের পর মৃত্যুবরণ করলে সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক অস্থিরতা ও গনবিক্ষোভের পটভূমিতে ভারত সরকার বাধ্য হয় তেলেগু ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের জন্য '' অন্ধ্রপ্রদেশ'' নামক একটি অঙ্গরাজ্য গঠনে, ১৯৫৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর ধর কমিশন এবং জে ভি পি কমিটি'র রিপোর্টে ভাষার ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্য গঠনের নিষেধ - নির্দেশ অমান্য করেই। গঠিত হয় অন্ধ্রপ্রদেশ, ভাষার ভিত্তিতে গঠিত প্রথম অঙ্গরাজ্য।
(৪) ১৯৫৬ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে পাশ হয়, '' ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পুনর্গঠন আইন '' যার মাধ্যমে মুলতঃ ভাষার ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে ভাগ করা হয় ১৪টি অঙ্গরাজ্য এনং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
(৫) ১৯৬০ সালে বোম্বে নামক রাজ্যটিকে বিভক্ত করা হয় গুজরাট এবং মহারাষ্ট্র নামক দুটি অঙ্গরাজ্যে।
(৬) ১৯৬০ সালে দশম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে, পর্তুগীজ অধিগৃহীত দাদরা ও নগর হাভেলি ভারতের অন্তর্ভুক্তিকরনের পরে তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান করা হয়।
(৭) ১৯৬২ সালে দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে, পর্তুগীজদের অধীনতা থেকে মুক্ত গোয়া, দমন ও দিউ কে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান করা হয়।
(৮) ১৯৬২ সালে ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নাগাল্যান্ডকে একটি পৃথক অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হয়।
(৯) ১৯৬৬ সালে শাহ কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে পাশ হয়, '' পাঞ্জাব পুনর্গঠন আইন''। এই আইনের মাধ্যমে পাঞ্জাব বিভক্ত হয় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা নামক দুটি রাজ্য, একই সাথে গঠিত হয় , ''চণ্ডীগড়'' নামক একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
(১০) ১৯৬৯ সালে আসামের কিছুটা অঞ্চল নিয়ে তৈরী হয় একটি নতুন অঙ্গরাজ্য - ''মেঘালয়'' । (২২ তম সংবিধান সংশোধনী )
(১১) ১৯৭১ সালে হিমাচল প্রদেশ নামক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি একটি পৃথক অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।
(১২) ১৯৭৫ সালে ৩৬তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে , সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যের স্বীকৃতিলাভ করে।
(১৩) ১৯৮৬ সালে মিজোরামে, ১৯৮৭ সালে অরুনাচলপ্রদেশ, ১৯৮৭ সালে গোয়া, এই তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, তিনটি পৃথক অঙ্গরাজ্যের মর্যাদালাভ করে।
(১৪) ২০০০ সালে গঠিত হয় তিনটি নতুন ভারতীয় অঙ্গরাজ্য - ছত্তিশগর , ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরাঞ্চল।
(১৫) ২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর জম্মু-কাশ্মীর নামক রাজ্যটি ভেঙ্গে জম্মু - কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়।
(১৬) বর্তমানে ভারতে ২৮টি অঙ্গরাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে ।
➣উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম কিভাবে একটি নতুন রাজ্য গঠন করা হয় এবং কোনো অঙ্গরাজ্যের পুনর্গঠন, সীমানার পরিবর্তন, নাম পরিবর্তন, একটা রাজ্য থেকে দুই না তার তার অধিক রাজ্যে বিভাজন করা যায় ।
যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে আবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এইরকম সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের সাইটে ভিসিট করুন। পোস্টটি কেমন লাগলো আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেনা। ধন্যবাদ🙏
No comments:
Post a Comment